বাসস
  ২৩ জুন ২০২৪, ১১:০৭

শরীয়তপুরের সোনার বাংলা এভিনিউ এখন চরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র বিনোদনের ঠিকানা

॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২৩ জুন, ২০২৪ (বাসস) : প্রায় পাঁচ দশক থেকে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়ার বিস্তীর্ণ পদ্মা পাড়ের জনপদ বিলীন হচ্ছিল ভাঙনে। ভাঙনের আগ্রাসনে বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাচা-পাকা স্থাপনা সহ ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। বিপন্ন হয়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
তাইতো এ জনপদকে ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় ২০২২ সালে তৎকালীন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হওয়ায় সখিপুরের চরাঞ্চলের ভাঙন কবলিত জনপদের মানুষের স্বপ্নকেও হার মানিয়ে সোনার বাংলা এডিনিউ এখন একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শুধু ঈদ-পার্বণই নয় এখন যে কোন উৎসবেই এখানে চোখে পড়ে সকল বয়সী মানুষের আনন্দ উদযাপনের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। বাঁধের কাজ শেষ হলে এই জনপদের মানুষ শুধু ভাঙন থেকেই রক্ষা পাবেনা পুরো এলাকা হয়ে উঠবে মুখোরিত বিনোদন কেন্দ্র। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও ফিরবে প্রাণের সঞ্চার।
ঈদের আনন্দ উদযাপনে সোনার বাংলা এভিনিউয়ে আসা সখিপুরের গৌরাঙ্গ বাজার এলাকার বিনোদন প্রেমী আহমেদ শাকিল বলেন, দুই বছর আগে এ উত্তর তারবুনিয়া ষ্টেশন বাজার ঘাট এলাকায় ভাঙনের যে চিত্র দেখেছিলাম তা যেন এখন স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। আসলেই কি এ সেই জায়গ। এ অঞ্চলের মানুষ এখন শুধু আর ঈদ-পার্বণ নয়, যে কোন অবসর বিনোদনে ছুটে আসেন সোনার বাংলা এভিনিউয়ে। কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের ভাঙন আতংক ভেসে গেছে।
সখিপুর গ্রামের সাবেকুন্নাহার বলেন, এ বাঁধ বাস্তবায়নের আগে আমাদের কোন বিনোদন উদযাপনের জায়গা ছিল না। সোনার বাংলা এভিনিউ রক্ষা বাঁধ এখন আর ভাঙন রোধের স্থাপনা নয়, আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। যে কোন উৎসবকে ঘিরে এখানে মানুষের যে ঢল নামে, তা দেখলে কে বলবে দুই বছর আগে এ জনপদ ছিল এক ভয়াল আতংকের।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, এ জনপদের স্থায়ী ভাঙন রোধে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। নদী ভাঙন রোধে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। বাঁধ বাস্তবায়নের ফলে শুধু স্থায়ী ভাঙনই রোধ হবে না, দুর্যোগই মোকাবেলসহ পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায়ও অত্যন্ত সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। সোনার বাংলা এভিনিউকে আন্দমুখর ও পরিবেশ বান্ধব করতে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, লাগানো হবে গাছ, বানানো হবে গোসল করার ঘাটলা।
সাবেক পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সর্বনাশা পদ্মার ভাঙা—গড়ার  ইতিহাস ৫০ বছরেরও বেশি। ২০১৮ সালের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের করুন চিত্র মিডিয়ার বদৌলতে দেখেছে বিশ^বাসী। সেই দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে নির্দেশ দেন ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ করতে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিক শরীয়তপুর জেলাকে ভাঙনমুক্ত করতে ২০১৯ সালে আমরা কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে নড়িয়ার জয় বাংলা এভিনিউ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে। চরাত্রা, নওপাড়া ও কাচিকাটা ইউনিয়নের স্বাধীন বাংলা এভিনিউয়ের কাজ শেষ হবে এ জুনে। সখিপুরের সোনার বাংলা এভিনিউয়ের কাজও নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা শেষ করব ইনশাআল্লাহ। কীর্তিনাশার ভাঙন রোধের কাজও শেষ পর্যায়ে। জাজিরার রুপসী বাংলা এভিনিউয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। আমাদের গৃহীত প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়ন শেষ হলে ইনশাআল্লাহ শরীয়তপুরবাসীর কাছে নদী ভাঙন ফেলে আশা ধুসর স্মৃতিতে পরিণত হবে।
নড়িয়ার জয় বাংলা এভিনিউ ইতিমধ্যে জেলাবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নড়িয়ার জয় বাংলা এভিনিউ ও বাস্তবায়নাধীন সখিপুরের স্বপ্নের সোনার বাংলা এভিনিউ এখন চরাঞ্চলসহ সকল মানুষের স্বপ্নের বিনোদন কেন্দ্রে রুপ নিয়েছে। ঈদ, বৈশাখসহ সকল উৎসবে রক্ষা বাঁধে মানুষের উৎসবমুখর উপস্থিতিই বলে দেয়  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র সরকারের  জনবান্ধব কাজের ফলাফল।