শিরোনাম
টুঙ্গিপাড়া, ২ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলাধীন ঘাঘর নদীতে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এক বর্ণাঢ্য নৌকা বাইচ উৎসব গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘাঘর নদীর খেজুরবাড়ি থেকে মান্দ্রা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার জুড়ে আয়োজিত এ নৌকা বাইচ উৎসবে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা বর্ণিল ৫০টি নৌকাযোগে এতে অংশ নেয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এ নৌকাবাইচ উৎসব উপভোগ করতে নদীর দুই পাড়ে ভিড় করে।
রাধাগঞ্জ বাজার বনিক সমিতি প্রথমবারের মতো এবছর কালীপূজা উপলক্ষে এই নদীতে নৌকা বাইচ উৎসবের আযোজন করে। নৌকা বাইচকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকে মানুষ জমায়েত হতে থাকেন নদীর দুই পাড়ে। সেখানে বসে গ্রামীণ মেলা। দুপুরে নৌকা বাইচে অংশ নিতে চলে আসেন নৌকাসহ মাঝিমাল্লারা।
দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তুমুল বাইচ। বাহারি নৌকাগুলো দেখতেও ছিল দৃষ্টিনন্দন। দারুণ প্রাণোচ্ছল তার মাঝি-মাল্লার দল। নদীর বুকে তাদের ছুটে চলা ও বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে নদীর দুই পাড়ে থাকা হাজারো দর্শনার্থী। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা বাইচ লোকায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতির যে অংশ,তা ভুলে যায়নি বাঙালি। তাই তো হেমন্তের মনোরম বিকেলে নদীপাড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নামে।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার লখন্ডা গ্রামের নিটুল রায় বলেন, এখানে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। অনেক দিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে এতো কালারফুল ও প্রাণবন্ত নৌকা বাইচ উপভোগ করলাম ।
কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মনু দাড়িয়া বলেন, আমি একটি ট্রলার ভাড়া করে আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এই নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। আমাদের সাথে কয়েকটি শিশু আছে। যারা জীবনে এই প্রথম নৌকাবাইচ দেখলো। এই বাইচ দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়েছে।
গণমাধ্যম কর্মী মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় এক সময় অর্ধশত স্থানে দূর্গা, লক্ষ্মী, কালী ও বিশ্বকর্মা পূজায় নৌকা বাইচ হতো। কালের বিবর্তনে খাল,নদী দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঐহিত্যবাহী এ নৌকা বাইচ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিনোদনমুখী এই নৌকা বাইচকে ধরে রাখার জন্য আমি উপজেলার নদী ও খাল দখলমুক্ত এবং খননের দাবী জানাচ্ছি ।
রাধাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান শেখ বাসসকে বলেন, এবছর প্রথম বারের মতো ঘাঘর নদীতে এ নৌকা বাইচ উৎসবের আয়োজন করেছি। এতে সাধারণ মানুষের যে সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা ভবিষ্যতে নিয়মিত এ নৌকা বাইচ উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।
নৌকা বাইচ শেষে সন্ধ্যায় রাধাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির পক্ষ থেকে অংশ গ্রহনকারী বাছারী নৌকাগুলোর মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ সময় রাধাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।