
টাঙ্গাইল ১২ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : এক সময়ের সফল ক্রিকেটার আরাফার রহমান এখন নিজেই ক্রিকেটার তৈরীর কারিগর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন।
তার হাত ধরে টাঙ্গাইলে অনেক মেধাবী ক্ষুদে ক্রিকেটার তৈরী হচ্ছে ।
টাঙ্গাইলের অনেক খেলোয়াড়রই বর্তমানে বয়সভিত্তি দল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে তাদের যোগ্যতা ও মেধার পরিচয় দিচ্ছে। কেউ বোলার, কেউ আবার দুর্দান্ত ব্যাটার। তাদের এই সাফল্যের পিছনে মূল অবদান কার্যত আরাফাত রহমানের।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বয়স ভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ এবং ১৮ দলে নিয়মিতই টাঙ্গাইলের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ চোখে পড়ে। টাঙ্গাইলের এসব মেধাবী ক্রিকেটার এখন প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশ দলে। আর এ ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন কোচ আরাফাত রহমান। তার কারনে টাঙ্গাইলের ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
আরাফাতের পরিচালিত টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমী থেকে এ পর্যন্ত এক হাজারের অধিক ছেলে-মেয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। আরাফাতের কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম ছাত্র জয় রাজ শেখ ইমন যুব অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। বর্তমানে ইমন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব দলের নিয়মিত খেলোয়াড়।
এছাড়া বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়ী দলের তিনজন টাঙ্গাইলের ক্রিকেটার রিফাত বেগ, রিজান হোসেন, ও দেবাশীষ সরকারও কোচ আরাফাতের ছাত্র।
বাসস’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে টাঙ্গাইলের এক সময়ের প্রতিভাবান ক্রিকেটার ও সফল কোচ আরাফাত রহমান বলেন, তার বাবা আব্দুর রহমান ১৯৬২ সালে ঢাকা মোহামেডান দলের নিয়মিত ক্রিকেটার ছিলেন।
এছাড়া তার চাচা প্রয়াত গোলাম রসুল মোল্লা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি এবং বিভাগীয় ক্রীড়া ও জেলা ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাবা ক্রিকেটার ও চাচা ক্রিকেট সংগঠক। তাঁদের অনুপ্রেরণায় আরাফাত রহমানের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের শুরুটা হয় ১৯৯৩ সালে নির্মাণ স্কুল টিকেট টুর্নামেন্টের মাধ্যমে।
১৯৯৯ সালে স্কুল ক্রিকেটে টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে উইকেটরক্ষক ও ব্যাটার হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন আরাফাত।
২০০০ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের স্ট্যান্ড-বাই ক্রিকেটার ছিলেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন। ২০০৯ সালে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। তারপরেও তিনি দমে যায়নি। মনোযোগ দেন ক্রিকেট কোচিং এর দিকে।
এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে লেভেল-এ, লেভেল ওয়ান ও লেভেল-টু ক্রিকেট কোচেস ট্রেনিং সফলভাবে শেষ করেন।
২০১১ সালে পহেলা অক্টোবর বিসিবি থেকে টাঙ্গাইল জেলা ক্রিকেট কোচ হিসেবে নিয়োগ পান আরাফাত। শুরু হয় ক্রিকেট কোচ হিসেবে পথচলা। ২০২২ সালে ডেভেলপমেন্ট কোচ অফ দ্যা ইয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন আরাফাত রহমান।
ক্রিকেট কোচিংয়ে সফলতার অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে পয়লা জুলাই বিসিবি থেকে জেলা কোচ হতে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা বিভাগীয় সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান।
আরাফাতের অধীনে ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ এবং ১৮ ঢাকা বিভাগে টাঙ্গাইল জেলা ১৮ বার চ্যাম্পিয়ন এবং ৮ বার রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এ সাফল্যে কোচ হিসেবে অনন্য অবদান রাখেন আরাফাত।
২০১৬ সালে প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সারাদেশের ৫৬০ টি স্কুলের মধ্যে টাঙ্গাইল স্কুল এন্ড কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই সফলতার পিছনে কোচ হিসেবে আরাফাতের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। এরপর ২০২৪ সালে স্কুল টুর্নামেন্টে ভারত সফরে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আরাফাত ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে প্রাইম ধলেশ্বর ক্লাবের হেড কোচ হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
আরাফাত আরো জানান, ২০০৭ সালে ৮ মার্চ টাঙ্গাইলে তার নিজস্ব উদ্যোগে টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমী নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এখানে তিনি ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত এক হাজারের অধিক ছেলে মেয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে এই ক্রিকেট একাডেমির পরিসর আরো বৃদ্ধি করার ইচ্ছে আছে।