বাসস
  ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৪১
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:২২

ওয়ার্নার-মার্শের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় অস্ট্রেলিয়ার

ব্যাঙ্গালুরু, ২০ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্র্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ^কাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজ টুর্নামেন্টে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। এই জয়ে ৪ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তানকে সরিয়ে টেবিলে চতুর্থস্থানে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। এই হারের পর ৪ খেলায় অস্ট্রেলিয়ার সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে থাকায় পঞ্চমস্থানে নেমে গেল আগের ম্যাচে ভারতের কাছে হারা পাকিস্তান।  
প্রথমে ব্যাট করে ওয়ার্নার-মার্শের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন দলের এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান। ওয়ার্নার ১৬৩ ও মার্শ ১২১ রান করেন। জবাবে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ২৭ বল বাকী থাকতে ৩০৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার জাম্পা ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
ব্যাঙ্গালুরুতে টস জিতে প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। ব্যাট হাতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ওয়ার্নার ও মার্শ। বিশ^কাপ ইতিহাসে  উদ্বোধনী জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৩ বলে ২৫৯ রান করেন  তারা। বিশ^কাপে যেকোন উইকেট জুটিতে এটি সর্বোচ্চ রানে ষষ্ঠস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বিশ^কাপে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি।
দুর্দান্ত জুুটি গড়ার পথে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ার্নার-মার্শ উভয়েই। দু’টি সেঞ্চুরিই হয়েছে ৩১তম ওভারে। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে ওয়ানডেতে ২১তম সেঞ্চুরি করেন ৮৫ বল খেলা ওয়ার্নার। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি ওয়ার্নারের। এ ইনিংস খেলার পথে  ভারতের বিরাট কোহলির পাশে বসলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা চারটি সেঞ্চুরি আছে কোহলির।   
৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় শতক করেন বার্থ ডে বয় মার্শ। পাক্কা ১শ বল খেলে জন্মদিনে ওয়ানডে ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করা বিশে^র ষষ্ঠ খেলোয়াড় হলেন মার্শ। নিউজিল্যান্ডের রস টেইলরের পর বিশ^কাপ মঞ্চে জন্মদিনে সেঞ্চুরির নজির গড়লেন মার্শ।
এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে নাম উঠেছে ওয়ার্নার-মার্শের। চতুর্থবারের মত বিশ^কাপে দুই ওপেনারের সেঞ্চুরির ঘটনা ঘটলো। এরমধ্যে দু’বার এমন রেকর্ডের মালিক শ্রীলংকার উপুল থারাঙ্গা ও তিলকরতেœ দিলশান।
৩৪তম ওভারে মার্শকে আউট করে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১০টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১০৮ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১২১ রান করে আউট হন  মার্শ।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর দ্রুতই ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ০ ও স্টিভেন স্মিথ ৭ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরলে  ২৮৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারা অসিরা।
দলের রান ৩শ পার করে পেসার হারিস রউফের বলে বিদায় নেন ওয়ার্নার। ১৪টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১২৪ বলে ১৬৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি। এই নিয়ে বিশ^কাপে তৃতীয়বারের মত দেড়শ রানের ইনিংস খেললেন ওয়ার্নার। যা আর কোন ব্যাটারের নেই। ওয়ানডেতে এই নিয়ে সপ্তমবার দেড়শ রানের ইনিংস খেলে দ্বিতীয়স্থানে আছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৮বার দেড়শ রানের ইনিংস আছে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার।
৪৩তম ওভারে দলীয় ৩২৫ রানে ওয়ার্নার ফেরার পর অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেন  পাকিস্তানের আফ্রিদি ও রউফ। শেষ ৪৬ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তুলতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রানের সংগ্রহ পায় অসিরা। পরের দিকে দুই অংকের কোটা স্পর্শ করেছেন  মার্কাস সটয়নিস (২১) ও জশ ইংলিশ (১৩) ।
পাকিস্তানের আফ্রিদি ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৫টি ও রউফ ৮ ওভারে ৮৩ রানে ৩ উইকেট নেন। এই নিয়ে তৃতীয়বার ওয়ানডেতে তৃতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন আফ্রিদি।
৩৬৮ রানের বিশাল টার্গেটে জবাবটা ভালই দিচ্ছিলো  পাকিস্তানের। ১২৭ বলে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন পাকিস্তানের দুইন  ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক। পাঁচ বোলার ব্যবহার করেও পাকিস্তানের জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না  অসি অধিনায়ক কামিন্স। অবশেষে ২২তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন স্টয়নিস। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ওয়ানডেতে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬১ বলে ৬৪ রান করা শফিককে ফিরিয়ে দেন  স্টয়নিস।
শফিকের পর ৭১ বল খেলা ইমামকেও ৭০ রানে থামিয়ে দেন স্টয়নিস। ওয়ানডে ২০তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে  ১০টি বাউন্ডারি মারেন ইমাম।  
দুই ওপেনারের বিদাযের পর তিন নম্বরে নেমে ১৮ রান করা বাবর আজম  স্পিনার জাম্পার শিকার হলে  ১৭৫ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এ অবস্থায় সৌদ শাকিলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই জুটি ভয়ংকর হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। এমন সময় ৫টি চারে ৩০ রান করা শাকিলকে শিকার করে দলকে গুরুত্বপূর্ন ব্রেকথ্রু এনে দেন অসি দলপতি কামিন্স।
এরপর ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে আবারও জুটির গড়ার চেষ্টা করেন রিজওয়ান। ৩টি ছক্কায় দ্রুত রান তোলায় মনোযোগি ছিলেন ইফতিখার। দু’জনে মিলে দলের রান ২৬৯এ নিয়ে যান। এমন অবস্থায় শেষ ১২ ওভারে ১০৩ রান দরকার ছিলো পাকিস্তানের। কিন্তু এরপরই পাকিস্তানের ইনিংসে ধ্বস নামে। ৩৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় উপমহাদেশের দলটি।
৩৯তম ওভারে ইফতিখারকে ২৬ রানে লেগ বিফোর আউট করে পাকিস্তানের ইনিংসের ধ্বস  শুরু করেন জাম্পা। ৪১তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার মাথার ব্যাথার কারন রিজওয়ানকেও লেগ বিফোর আউট করে অসিদের জয়ের পথ সহজ করে ফেলেন জাম্পা। ৫টি চারে ৪০ বলে ৪৬ রান করেন রিজওয়ান।
দলীয় ২৭৪ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রিজওয়ানের আউটের পর পাকিস্তানকে ৩০৫ রানে অলআউট করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। জাম্পা ৫৩ রানে ৪টি, কামিন্স ৬২ ও স্টয়নিস ৪০ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৩৬৭/৯, ৫০ ওভার (ওয়ার্নার ১৬৩, মার্শ ১২১, আফ্রিদি ৫/৫৪)
পাকিস্তান : ৩০৫/১০, ৪৫.৩ ওভার (ইমাম ৭০, শফিক ৬৪, জাম্পা ৪/৫৩)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: ডেভিড ওয়ার্নার(অস্ট্রেলিয়া)।