শিরোনাম
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে সিরিয়ার দ্বিতীয় শহর আলেপ্পো’র পতনে অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে বাহরিয়া বাক্কুরের মতো অন্যদের জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুর্নমিলন নিয়ে এসেছে।
প্রায় এক দশকের ব্যবধানে ৪৩ বছর বয়সী বাক্কুর অবশেষে তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে সক্ষম হন। সরকারী বাহিনী তাদের শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করলে তারা আলাদা হয়ে যান।
আলেপ্পোতে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড হামলা একটি যুদ্ধকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। যুদ্ধটি শেষ না হলেও বেশিরভাগ বছর ধরে স্থগিত ছিল।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া উত্তর সিরিয়ার যুদ্ধে শত শত লোক নিহত হয়েছে । বেসামরিক নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কিন্তু বাক্কুরের জন্য এ যুদ্ধ তার সাথে আবার তার ছেলের পুর্নমিলন ঘটিয়েছে। অশ্রুসজল বাক্কুর বলেন, ‘আমি এটা আশা করিনি। ভেবেছিলাম যে ওকে দেখার আগেই আমি মরে যাব।’
২০১৬ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী যখন আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোকে নৃশংস অবরোধের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করে, তখন তিনি তার ছেলে মোহাম্মদ জোমাকে শেষবার দেখেছিলেন। যার বয়স এখন ২৫ বছর। জোমা এখন চার সন্তানের জনক। জোমা হাজার হাজারের মধ্যে একজন, যারা সম্প্রতিক এ যুদ্ধের আগে আলেপ্পো ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তারা আবার শহরটিতে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি অবর্ণনীয় আনন্দ। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমি আলেপ্পোতে ফিরে এসেছি।’
আলেপ্পো ছেড়ে যাওয়ার পর, জোমা তার পৈতৃক বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দূরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আফরিনে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন। জোমা বলেন, ‘আমরা জানতাম যে, আমরা আলেপ্পোতে থাকতে পারব না। কারণ আমাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আমরা আটকা পড়েছিলাম। আমাদের আলেপ্পো ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল।’জোমা একটি সামরিক ভেস্ট ও একটি ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা কেফিয়াহ স্কার্ফ পরেছিলেন। আলেপ্পো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে।
জোমা তার মাকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি তাকে (বাক্কুর) দেখতে না পাওয়া পর্যন্ত মিনিট ও ঘন্টা গণনা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ্, আমি তাকে আবার দেখতে পেয়েছি। মনে হচ্ছে, পুরো পৃথিবী আমাকে দেখে হাসছে।’ শহরের কিছু অংশে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এ আশঙ্কায় রাস্তাগুলো শান্ত ও বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন ছিল।
জাতিসংঘ বুধবার জানিয়েছে, যুদ্ধের ফলে ১ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ ‘ইদলিব ও উত্তর আলেপ্পো জুড়ে নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত’ হয়েছে। জাতিসংঘের দূত গেইর পেডারসেন বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সিরিয়ার জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারো জন্য এটি গুরুতর হুমকি, অন্যদের জন্য আশার সঞ্চার করেছে।’ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি শহরের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
জোমার জন্য তার পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার আনন্দ অসম্পূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পরে সরকারী বাহিনী তার বাবাকে আটক করেছিল এবং তারপর থেকে ‘আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমি শুধু চাইতাম যে, আমার বাবা যেন আবার ফিরে আসে।’
জোমা ফিরে আসার পর বাড়ির বাইরে, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। যদিও কথোপকথনটি দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বশেষ খবরে পরিণত হয়েছিল।
৩৫ বছর বয়সী আহমেদ ওরাবিও আলেপ্পোতে নিজের বাড়ি ফিরেছেন। তিনি তার অল্পবয়সী মেয়ের সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছেন। সাত বছর আগে তারা ইদলিব প্রদেশে পালিয়ে যায়। আরো অনেক লোক সিরিয়ার অন্যত্র বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বিমান হামলা আবার ওরাবির স্ত্রীকে নিরাপত্তার খোঁজ করতে বাধ্য করেছিল। আলেপ্পোতে তাদের মেয়ে অ্যাসিলের সাথে তার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিল। বিরোধী মিডিয়া কর্মী ওরাবি এত দিন তার পরিবার ও নিজ শহর থেকে দূরে থাকতে চাননি। কিন্তু আলেপ্পো আসাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এতদিন ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ফিরে আসাটা ছিল স্বপ্নের মতো।’
ওরাবি বলেন, ‘যখন যুদ্ধ শুরু হয়, আমি অপেক্ষা করিনি। আমি আমার মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলাম। আমি তার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার নাম ধরে ডাকলাম’ এবং ‘একবার যখন আমি তাকে দেখলাম, তখন এটি ছিল এক সুন্দর মুহূর্ত ।’ তিনি আলাদাভাবে কাটানো বছরগুলোর জন্য অনুশোচনা করেন, কিন্তু এখন হারিয়ে যাওয়া সময় পূরণ করার চেষ্টা করছেন।তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না একজন বাবা হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল। আমি তাকে আমার বাহুতে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পারিনি।’ আলেপ্পোতে ওরাবি তার মেয়েকে নিয়ে সপরিবারে একটি পাবলিক পার্কে নিয়ে যায়, যেখানে তারা একসাথে খেলতে ও সুখ স্মৃতি তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘একজন বাবা হিসাবে এটি সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।’