বাসস
  ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯

বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার জান্তা

ইয়াংগুন, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস ডেস্ক) : মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা ভয়াবহ বিমান হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মঙ্গলবারের এ হামলায় নারী ও শিশুসহ প্রায় ১শ’ জন নিহত হয়েছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলের কানবালু পৌর শহরে এই বিমান হামলা চালানো হয়।
জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশসমূহ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সামরিক সরকার (জান্তা) মঙ্গলবার রাতে বিমান হামলার কথা নিশ্চিত করলেও কতোজন নিহত হয়েছে তা জানায় নি।
জান্তা বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপসমূহের প্রসঙ্গ টেনে মুখপাত্র জ মিন তান বলেছেন, পাজি গাই গ্রামে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টার দিকে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের অফিস উদ্বোধন করা হচ্ছিল। আমরা ওই জায়গায় হামলা চালাই।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে অভ্যুত্থান বিরোধী ইউনিফর্ম পরা কিছু যোদ্ধা ছিল। যদিও বেসামরিক পোশাকেও কিছু লোক থাকতে পারে।
এই মুখপাত্র কিছু প্রাণহানির জন্যে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের পুঁতে রাখা মাইনকেও দায়ী করেছেন।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের পর দেশজুড়ে জান্তা বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর উত্থান ঘটে।  
এদিকে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) শ্রম মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই হামলায় শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ বহু নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরে নতুন দপ্তর উদ্বোধন উপলক্ষে জড়ো হওয়া লোকজনের ওপর জান্তা সরকারের যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ ও গুলি চালানো হয়।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকার। দেশটিতে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক বাহিনী। এর বিরুদ্ধে দেশটিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে তা দমন করে। এ দমন পীড়নে এ পর্যন্ত তিন হাজার একশ’ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষক গ্রুপ জানিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর চালানো সব হামলার মধ্যে সর্বশেষ মঙ্গলবারের এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন দ’ুজারিক এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।
ওয়াশিংটন এ হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।     
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধ এবং বার্মার জনগণের প্রকৃত ও অন্তর্ভূক্তিমূলক গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান জানাতে বার্মার শাসকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বার্মা মিয়ানমারের পুরনো নাম।
জার্মানীও এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা আশা করছে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী তার জনগণের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করবে।
এদিকে গত মাসে এক সামরিক কুচকাওয়াজে জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইং বিরোধীদের দমনে অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
এছাড়া জান্তা সরকার জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো ছয়মাস বাড়োনো ও নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে আগস্টের মধ্যে তারা একটি নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছিল।
ভোটের জন্যে দেশটির ওপর তাদের পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ নেই উল্লেখ করে তারা নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়।