বাসস
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৫৪

এলডিসি উত্তরণ চ্যালেঞ্জ : নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ

ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : নবায়নযোগ্য বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, উদ্যোক্তাদের রপ্তানি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ট্যারিফ পরিশোধ করার পাশাপাশি অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সোর্সিং কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখবে না। তবে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলেছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিল্প-কারখানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ ও নীতি সংস্কার করা হবে।  
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলানায়তনে ‘বাংলাদেশের শিল্পখাত দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে উত্তোরণ : চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তারা এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (¯্রডো) চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।   
কর্মশালায় প্যানেল আলোচক ছিলেন গবেষনা সংস্থা র‌্যাপিড এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ, ¯্রডোর সাবেক পরিচালক সিদ্দিক জোবায়ের এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আলী আহম্মেদ শওকত। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এজাজ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও রপ্তানি ইউং চিফ মো. আব্দুর রহিম খান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এলডিসি উত্তোরণ এবং পরিকল্পনা মাফিক কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জণের লক্ষ্যে চিরাচরিত জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন করাটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার তাই সংশ্লিষ্ট নীতিসমূহ প্রয়োজন হলে সংস্কার করবে।  
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আগামীতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার সব ধরনের সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং ইইউ’র বাণিজ্য শর্ত পূরণে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে সরকারকে সংশ্লিষ্ট নীতি সংস্কার করতে হবে। তিনি সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান দেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে শিল্পোদ্যোক্তাদের ইডকল থেকে ঋণ গ্রহণ করে রুপটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের আহবান জানান। তিনি জানান, উদ্যোক্তারা এখান থেকে মোট খরচের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্প কারখানায় যেসব প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। সরকার তাদের নিকট থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা করছে।
বিদ্যুৎ সচিব জানান, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ১০টি প্রকল্প চলমান। সোলার বা নাবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আমরা ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। তিনি জানান, এখন আমরা সবমিলিয়ে ১০৮ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি, এর সবগুলো বাস্তবায়ন হলে, প্রায় দশ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন করা যাবে। তিনি বলেন, আগামী ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়া যাবে।
সরকারের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারের একটা বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী অক্টোবরে চালু হবে- সেখান থেকে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এছাড়া মোংলা ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় আরও ২টা বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, কার্বন নি:র্গমন হ্রাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইমিশন ট্রেডিং স্কিম (ইটিএস) চালু রয়েছে, যা প্রথমবারের মত এবছর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হচ্ছে। এখানে স্থানীয় উৎপাদনকারি এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানের উৎপাদনকারিকে সমানভাবে কার্বন কর পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপান ইটিএস চালু করেছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর ইইউ যদি পোশাক শুল্ক সুবিধা অব্যাহত না রাখে, তাহলে পোশাকের উপর আমাদেরকে ১১.৬ শতাংশ ট্যারিফ দিতে হবে। এর সঙ্গে যোগ হবে ৭ থেকে ৮ শতাংশ কার্বন কর, ফলে তখন মোট ১৮ থেক ১৯ শতাংশ হারে ট্যারিফ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, এইড পার্টনার বা ক্রেটিড রেটিং এজেন্সিগুলো কার্বন নি:সরণের উপর নজর দিচ্ছে।
¯্রডো চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা এনার্জি অডিটর দিয়ে কারখানা অডিট করার জন্য শিল্পোদ্যেক্তাদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ পরিচালক শামস মাহমুদ যেসব কারখানা নিজেরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে তার বিদ্যুৎ চাহিদার পুরোটা মেটাচ্ছে, তাদের ভর্তুকি প্রদানের আহবান জানান। তিনি কারখানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার মনিটারিংয়ের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সংস্থা গঠনের দাবি জানান।