শিরোনাম
॥ কলিম সরওয়ার ॥
চট্টগ্রাম, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী চট্টগ্রামের এমপিদের সময় কাটছে নেতাকর্মীদের মাঝে। প্রতিদিন সকাল থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি কুশল বিনিময় ও গণসংযোগে ব্যস্ত তারা।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৫ প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ মনোনীত খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু- আসনে নৌকার প্রার্থী এসএম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী- হালিশহর) আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে নৌকা প্রতীকের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেব ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান জয়লাভ করেন। চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জয়ী হন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শপথ গ্রহণের পর গত সোমবার পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম আসেন। মন্ত্রী সেখানে ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে তার সম্মানে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সংবর্ধনা শেষে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় যান। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যোগ দেন এবং সর্বস্তরের মানুষ ও নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
ড. হাছান মাহমুদ সন্ধ্যার পরে বাবা-মা’র কবর জিয়ারত করেন। রাতে তিনি চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসেন এবং নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়স্থ বাসভবনে রাত্রিযাপন করেন। সকালে বাকলিয়া মৌসুমী এলাকার বাসা ঘুরে তিনি সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। গতকাল রাতে রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি উগান্ডা গেছেন।
চট্টল বীর আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী-তনয় ও শিক্ষা মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকায় অবস্থান করছেন। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু ও শিক্ষাক্রমে নতুন পদ্ধতি চালুর প্রেক্ষিতে তাকে এ সময়ে মন্ত্রণালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই মন্ত্রণালয়েই তাকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে।
তার ব্যক্তিগত সহকারী রাহুল দাশ বাসস’কে জানান, শিক্ষা মন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত অফিস করছেন। চট্টগ্রাম ও সারাদেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য কর্মী, সমর্থক ও ভক্ত তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসছেন। মন্ত্রী ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নিচে একটি কক্ষে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। আজ বা আগামীকাল তিনি চট্টগ্রাম আসতে পারেন।
ব্যারিস্টার নওফেল গত ৫ বছর শিক্ষা উপ-মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকা কোতোয়ালী-বাকলিয়া তো বটে, সমগ্র চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দিত। কিন্তু এতো বড় অর্জনেও শিশুবয়স থেকেই মার্জিত ও রুচিশীল আচরণের অধিকারী নওফেল চট্টগ্রাম আসবেন নিরবে। কোনো সংবর্ধনা নেবেন না তিনি।
মিরসরাই আসনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ-পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই হৃদরোগে আক্রান্ত তার বড় ভাইকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন। তিনি এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। এর আগে নির্বাচন-পরবর্তী ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি এলাকায় অবস্থান করেন। এ সময়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা বাদে পুরো সময়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ের মাঝে ছিলেন তিনি। মিরসরাইস্থ বাড়িতে ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের সাথে কুশল বিনিময় এবং সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কেটেছে তার। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে তার পোস্টারগুলো তিনি নিজ হাতে নামিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনের এমপি আওয়ামী লীগ মনোনীত খাদিজাতুল আনোয়ার সনি চট্টগ্রামের নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন। চট্টগ্রামের প্রথম নারী হিসেবে তিনি সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফটিকছড়ির সাবেক এমপি আলহাজ রফিকুল আনোয়ার-তনয়া সনি পিতার মতোই মানুষকে খাওয়ানো, তাদের কল্যাণে কাজ করার গুণাবলী লালন করেন। নির্বাচনী ফলাফলের পরই শুভাকাক্সক্ষীরা রাতেই গরু জবাই দেন তার ফটিকছড়িস্থ বাড়িতে। একদিন পর পারিবারিকভাবে মেজবানের আয়োজন করা হয়। এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ এসব আয়োজনে যোগ দেন।
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, ‘আমার পিতা আলহাজ রফিকুল আনোয়ার সারাজীবন ফটিকছড়ির মানুষের জন্য নিবেদিত ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের অক্লান্ত শ্রমের পাশাপাশি আমার বিজয়ী হওয়ার পিছনে আমার বাবার এ ভাবমূর্তি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। একটা বিষয় আমি বুঝেছি- মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করলে মানুষ অবশ্যই এর প্রতিদান দেয়।’
এমপি সনি আরো বলেন, ‘যেহেতু মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আমার সাথে ছিলেন, ফলে আমিও প্রথম দিন থেকেই তাদের সাথে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমার সকালে ঘুম ভাঙে তাদের ফোনে অথবা কলিং বেলের শব্দে। সেটি যতো ভোরেই হোক আমি ওঠে তাদের সাথে দেখা করি এবং যতো রাত পর্যন্তই তারা থাকেন, আমি ততক্ষণ তাদের সময় দেই। হয়তো ক্লান্তি থাকে, কিন্তু কোনো মানুষ যেন আমার ঘর থেকে বিমুখ হয়ে ফিরে না যান- সে চেষ্টা থাকে আমার।’
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা নির্বাচনের দিন থেকে শপথগ্রহণের দিন পর্যন্ত এবং শপথের পর আবারো এলাকায় ফিরে নেতাকর্মীদের ভিড়ে মিশে আছেন।
চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু- আসনে নৌকার প্রার্থী এসএম আল মামুন বিজয়লাভের পর থেকে ‘বাঁধভাঙা জন¯্রােতে’ মিশে আছেন।
বাসস-এর সাথে আলাপকালে সাবেক এমপি কাশেম মাস্টার-পুত্র সাংসদ মামুন বলেন, ‘প্রতিদিনের জন¯্রােত বাঁধবাঙা জোয়ারের মতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণমানুষের মধ্যে ডুবে আছি। মানুষের এ ভালবাসার গভীরতা কোনো ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না। প্রতিদিন শতশত মানুষ আসছেন, কেউ ফুল নিয়ে, কেউ বা বুকভরা ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাঝে শপথগ্রহণের জন্য ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেছি। বাকী সময়টুকু এলাকাতেই কাটছে। মাঝে দেড়দিন কক্সবাজার কেটেছে ব্যক্তিগত কাজে। কাজ শেষে আবার এলাকায় ফিরে এসেছি।’
সাংসদ মামুন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১২টি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ১৮ জানুয়ারি শুরু এ অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সীতাকু-র ১০ ইউনিয়ন ও কাট্টলীর দু’টি ওয়ার্ডে। আশা করছি, এসব অনুষ্ঠানে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রায় সব মানুষের সাথেই আমার দেখা হেয় যাবে।’
চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনের নির্বাচিত এমপি, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শপথগ্রহণের পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্বাচনোত্তর সময় কাটছে উৎসবের আমেজে। নির্বাচনী এলাকা, গহিরাস্থ গ্রামের বাড়ি ও পাথরঘাটাস্থ শহরের বাড়িতে প্রতিদিন শতশত মানুষের সমাগম ঘটে প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে। নির্বাচনী এলাকায় না গেলে সকাল থেকে একটানা গভীর রাত পর্যন্ত থাকেন পাথরঘাটার বাসভবনের ড্রয়িং রুমে। দুপুর হলে উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারেন। আবার একই চেয়ারে সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কুশল বিনিময়। এর মাঝেই এর-ওর সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের নবনির্বাচিত এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারই প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের জন্য এ বিজয় যেমন মহা-আনন্দের, তেমনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্যও। সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন এ কর্মপাগল মানুষটি। তাই তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তার আসনের মানুষ বিশ^াস করে, ছালামের হাত ধরেই বোয়ালখালী-চান্দগাঁও এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।
ছালাম মোহরাস্থ নিজের পৈত্রিক ভিটাতেই বসবাস করেন। ‘উঠোন বৈঠক’ তার একটি প্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালে এ উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সাথে মত বিনিময় করতেন। পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সারাবছরই যোগাযোগ রাখেন। এমপি হওয়ার পর মানুষের আনাগোনা আরো অনেক বেড়েছে। মাঝে শপথগ্রহণের দিন বাদে পুরো সময় এলাকার মানুষের মাঝেই মিশে আছেন এ সাংসদ। ইতিমধ্যে কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করে তিনি ভোটার ও সর্বস্তরের মানুষের সাথে সাক্ষাত করেছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু’র সময় কাটছে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী এ নেতার প্রথম অর্জন ছিল নৌকার মনোনয়ন লাভ। মনোনয়নলাভের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই তার প্রতিটি গণসংযোগ ও পথসভা ছিল উৎসবমুখর।
নির্বাচনে জয়লাভের পর স্বাভাবিকভাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও তার ভক্ত-সমর্থকদের ঊচ্ছ্বাস ছিল বেশি। মাঝে শপথগ্রহণের দিন ছাড়া প্রতিটি দিনই দলীয় নেতাকর্মী ও ভক্তদের ভিড়ে মিশে আছেন দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত এ তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা।
আলাপকালে বাসস’কে এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘আমার এ বিজয় দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য দারুণ আনন্দের। মহানগর আওয়ামী লীগ ও আমি একাট্টা হয়ে কাজ করেছি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এবং জয়লাভের পর এখনও আমরা একসাথে কর্মসূচি পালন করছি। দু-তিনটি ওয়ার্ড মিলে কর্মীসভা করে নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাত করছি এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছি। আমার বাসায়ও প্রতিদিন নেতাকর্মীদের মিলনমেলা বসে।’
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ মনোনীত এমএ লতিফের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াও কঠিন হয়ে ওঠেছিল। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা এখানে প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন দুই শিবিরে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়ের মালা লতিফের গলায়ই ওঠে।
এমপি লতিফ এমনিতেই এলাকা-বান্ধব সাংসদ হিসেবে পরিচিত। স্বাভাবিক সময়েও তিনি এলাকাবাসীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন। চট্টগ্রামে থাকলে যেকোনো মানুষের সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি একবার ঢুঁ মারেন। ‘নারী শক্তি’ নামে তার আসনভিত্তিক মহিলাদের একটি সংগঠনের মাধ্যমে তিনি ঘরে ঘরে পরিচিত। ফলে নৌকার বিজয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেমন খুশি, তেমনি নারী শক্তি’র নেটওয়ার্কে থাকা কর্মী বাহিনীও মহা-আনন্দিত।
রীতিমত ‘যুদ্ধ’ করে জিততে হয়েছে চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এ ত্যাগী নেতা মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বদলে। তিনবারের নির্বাচিত শামসুল হক চৌধুরী ১৫ বছরে এলাকায় বহু উন্নয়ন কর্মকা- করে এলাকাবাসীর ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে ওঠেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম নৌকার মনোনয়ন লাভে পাল্টে যায় সাবেক হুইপের সমস্ত হিসেব-নিকেশ।
বিজয়ের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বাসস’কে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন এলাকায় রাজনীতি করে আসছি। চেষ্টা করি মানুষের উপকার করার, কখনো কারো ক্ষতি করিনি। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে সবসময় আমার সদ্ভাব ছিল। আমি বড় বড় নেতাদের সাথে বেশি মিশতে না পারলেও প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের সব নেতাকর্মীর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা আছে। আমার এ বিজয়কে পটিয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের বিজয় হিসেবেই নিয়েছেন। ফলে ‘তাঁদের কাছের’ মানুষকে এমপি বানাতে পারার আনন্দ প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শেয়ার করতে হচ্ছে। আমিও তাদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে পারার সৌভাগ্যকে উপভোগ করছি।’
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের জয় অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনকে তার যথেষ্ঠ গুরুত্বের সাথে নেয়ার মনোভাব ফুটে ওঠেছিল।
এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও দানবীর হিসেবে পরিচিত মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র জাবেদের জয়ে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার সাধারণ মানুষ খুশি। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও মন্ত্রী হয়েও তার দুয়ার সবসময় সাধারণ্যের জন্য খোলা ছিল। নির্বাচনের পর থেকেই গ্রামের বাড়ি হাইলধর ও নগরীর সার্সন রোডস্থ বাড়িতে লোকে লোকারণ্য থাকছে। জাবেদকে ঘিরে ‘ঈদের দিন’-এর মতোই উৎসবের আমেজে এলাকাবাসী।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে প্রবীণ রাজনীতিক, নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিজয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ‘খুশির বান’ নেমেছে। এবার তিনি পড়েছিলেন ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় প্রচারণায় বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নৌকা’র পালেই জোর হাওয়া লেগেছে।
নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিজয়কে নৌকা সমর্থকদের বিজয় হিসেবে দেখছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘নজরুল সাহেব দলের পরীক্ষিত নেতা। তার বিজয় আমাদের সবার বিজয়। তাই নির্বাচনোত্তর এ সময়টুকুতে আমরা সবাই বিজয়োৎসব পালন করছি। দিনের অধিকাংশ সময় তিনি আমাদের সাথে কাটান এবং তিনি না থাকলেও আমরা আওয়ামী পরিবার জয়ের আনন্দ উপভোগ করছি।’
নৌকার প্রার্থী না হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের জয়কে আওয়ামী লীগের বিজয় হিসেবে দেখছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এখানে বিগত তিন মেয়াদে নৌকা প্রতীক নিয়ে ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি হয়েছেন। এবারও দল তাকেই মনোনয়ন দেয়। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার সাথেই ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ‘দিনশেষে ‘ঘরের ছেলে’ জয়লাভ করায় আমরা উচ্ছ্বসিত। আশা করি, এবার দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হবে।’
নবনির্বাচিত এমপি এমএ মোতালেব বাসস’কে জানান, ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের বহমান ¯্রােতধারার এ দলের নেতাকর্মীরা অনেক ধৈর্য্যশীল ও পরীক্ষিত। তারা রাজনীতি জানেন ও বুঝেন।’
এমপি মোতালেব বলেন, ‘এলাকার উন্নয়ন কর্মকা-ের স্বার্থে এতোদিন সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কেউ কেউ নদভী সাহেবের কাছে গেছেন। এখন সবাই কোনো দ্বিধা ছাড়াই এলাকার জনপ্রতিনিধির কাছে আসবেন, মন খুলে তাদের সমস্যা জানাবেন। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, তাদের বুক থেকে পাথর সরে গেছে। এ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন নির্ভয়ে সাংগঠনিক কর্মকা- চালাতে পারবেন। সঙ্গত কারণেই তাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই। এর প্রকাশ ঘটছে প্রতিদিন সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত পর্যন্ত।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান সিআইপির অধিকাংশ সময় কাটছে এলাকায়। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেও নৌকা প্রতীক পান সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
নির্বাচনের পর থেকেই শহরের বাসা, গ্রামের বাড়ি ও বাঁশখালীর আনাচে-কানাচে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। মুজিবুর রহমানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপ বাঁশখালীর মানুষের জন্য অন্যরকম এক আশীর্বাদ। এখানে বাঁশখালীবাসীর যেমন অবাধে চাকুরি হয়, তেমনি এ পরিবারের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন সেবা ও সাহায্য পেয়ে থাকেন। এ পরিবারের সদস্য নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় স্বভাবতই দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের আনন্দের মাত্রা অনেক বেশি।
শপথগ্রহণের পর বাঁশখালীতে মুজিবুর রহমানের সরব উপস্থিতি অনেক বেশি হলেও কয়েকবার নিরবে এলাকায় গেছেন। কাউকে না জানিয়ে রাতে হাসপাতালে গেছেন, রোগীদের সাথে কথা বলেছেন। এমনি করে পুরো মেয়াদে প্রতিটি সমস্যা নিজে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি মুজিব।