শিরোনাম
ঢাকা, ১০ মার্চ, ২০২৪ (বাসস) : প্লাস্টিক দূষণের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলার প্রয়োজন
সমন্বিত প্রয়াস।
শনিবার সন্ধ্যায় নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক এবং স্টেপ টু হিউম্যানিটি বাংলাদেশ আয়োজিত “প্লাস্টিক সংকট মোকাবেলায় সঠিক ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশে মিডিয়ার ভূমিকা” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।
বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকা জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি, স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার নির্বাহী পরিচালক, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা প্লাস্টিক দূষণ এবং এর থেকে সৃষ্ট বিপদের বৈজ্ঞানিক দিকগুলি নিয়ে গবেষণা তুলে ধরেন- যা সামুদ্রিক ও স্থলজগতের বাস্তুতন্ত্র, মানব স্বাস্থ্য এবং জলবায়ুর উপর এর গভীর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
সেমিনারে ব্যাপক প্লাস্টিক দূষণের ফলে উদ্ভূত অস্তিত্বের হুমকি প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার জরুরি প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন ড. মোহাম্মদ আলম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল, ড. মুহাম্মদ এনামুল কবির এবং ড. মোহাম্মদ আবু জাফর ব্যাপারী।
বক্তারা প্লাস্টিক উৎপাদনের তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি এবং পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন করেন । তারা প্লাস্টিক শিল্পের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের উদ্বেগজনক বৃদ্ধিকে আলোকপাত করে বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নির্গমনের জন্য এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব প্রজেক্ট করে।
ড. আলম সেমিনারে তার বক্তৃতায় প্লাস্টিক দূষণের ব্যাপক হুমকির ওপর জোর দেন, পরিবেশ ও মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকের উদ্বেগজনক উপস্থিতির ওপর আলোকপাত করেন। সাম্প্রতিক গবেষণার বরাত দিয়ে মানব স্বাস্থ্যের উপর প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব, বিশেষ করে হৃদরোগের সাথে এর যোগসূত্রের উপর তিনি জোর দেন।
ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের জটিল চক্রটি আরও অন্বেষণ করেছেন। তিনি সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিকের বিস্ময়কর উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরেন এবং প্লাস্টিক-দূষিত খাদ্য গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত আরও পরিবেশগত অবক্ষয় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলির জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
ড. আবু জাফর পরিবেশ এবং মানবদেহ উভয় ক্ষেত্রেই মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির বিষয়ে জোর দিয়ে সমস্যাটির বিস্তৃত প্রকৃতিকে তুলে ধরেন। এই প্লাস্টিকের কণাগুলি বিভিন্ন প্রতিকূল স্বাস্থ্যের প্রভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে, হৃদরোগের সাথে তাদের সংযোগের বিষয়ে একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ ছাড়া, পরিস্থিতি কেবল খারাপই হবে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (বার্ড) সাবেক পরিচালক নাসিমা আক্তার প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার ওপর জোর দেন। তিনি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
স্টেপ টু হিউমিনিটি, বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান কামরুল হাসান সামাজিক রীতিনীতি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন- যা প্লাস্টিক বর্জ্যের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। তিনি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উদাসীনতা ও সচেতনতার অভাবের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি তুলে ধরে বাস্তব সমাধানগুলি অন্বেষণ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
বার্ড এর সাবেক পরিচালক ড. আনোয়ার প্লাস্টিক দূষণের কারণে সৃষ্ট জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত পদ্ধতির অপরিহার্যতার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, সমাধানগুলি অপর্যাপ্ত এবং এর একটি ব্যাপক কৌশল অপরিহার্য।
সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় ব্যক্তিগত দায়িত্বের ওপর জোর দিয়ে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে সচেতনতার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে মিডিয়ার মুখ্য ভূমিকার ওপরও আলোকপাত করেন- সাংবাদিক ফিরোজ মিয়া, শামসুল হাবীব, সাইফুর হাসান, মো. আমজাদ হোসেন ও কোরা হাসান ইভানা।
সমাপনী বক্তব্যে, কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক দেলোয়ার জাহিদ প্লাস্টিক সংকট কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সমাজের সকল স্তরে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি প্লাস্টিক দূষণের হুমকি থেকে মুক্ত আরও টেকসই ও স্থিতিস্থাপক বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।