শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ মার্চ, ২০২৪ (বাসস): সারা বিশ্ব এখন ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা তথ্য প্রযুক্তির এ বিপ্লবে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ কিভাবে নিরাপদ থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত রাখার উপায় এবং সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত ও পরামর্শ নিতে আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট ও সামিট অফ দ্য ফিউচার সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শ সভা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি, বাংলাদেশের সহযোগিতায় বিআইজিএফ ও বিএনএনআরসি’র উদ্যোগে ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট: এন ওপেন, ফ্রি, অ্যান্ড সিকিউর ডিজিটাল ফিউচার ফর অল’ এবং ‘সামিট অব দ্য ফিউচার ২০২৪: মাল্টিল্যাটারাল সলিউশনস ফর এ বেটার টুমরো’ শীর্ষক এ পরামর্শ সভায় সরকার, নাগরিক ও যুব সমাজ, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম, কারিগরি সমাজ ও বেসরকারি খাতের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার। বৈষম্যহীন বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থায় বাংলাদেশ গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্টের সাথে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সরকারের যে লক্ষ্য তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি নিজ দেশের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় ও নিজ কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এতিহ্য, জীবন ব্যবস্থার আলোকে ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরী করতে হবে।
পরামর্শ সভার সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ) এর চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু বলেন, সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও এর সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এজন্য প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল রূপান্তরকে নিরাপদ করতে একে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে যার জন্য একটি কাঠামো প্রয়োজন। সেই কাঠামো তৈরিতে ও কাঠামোর ভেতরে আসতে বাংলাদেশের সমস্যা, সম্ভাবনা, চ্যালঞ্জগুলো কি তা নির্ধারণ করতে হবে।
সমাপনী সেশনের মূল বক্তব্য উপস্থাপনকারী আইসিটি ডিভিশনের এটুআই এর পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, জিরো ডিভাইড বা বৈষম্যহীন ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই, এজন্য প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর অনুরোধে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কার্যকর বহুপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগামী ২৫ বছরে বিশ্বকে কোথায় দেখতে চান সে বিষয়ে ‘আওয়ার কমন অ্যাজেন্ডা’ রিপোর্টের মাধ্যমে তার একটি ভিশন তুলে ধরেছেন ।
১২টি অ্যাজেন্ডা নিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। এ উদ্দেশে আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘সামিট অব দ্য ফিউচার ২০২৪’। এই সামিটের লক্ষ্য দুটি। এক, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রচেষ্টা জোরদার করা। দুই, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া।
১২টি অ্যাজেন্ডার মধ্যে মধ্যে অন্যতম ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট’। প্রথমবারের মতো সকলের জন্য একটি উন্মুক্ত, অবাধ ও নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে সামিট অব দ্য ফিউচারের মাধ্যমে পাস হতে যাচ্ছে এই গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট । ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট’এবং ‘সামিট অব দ্যা ফিউচার ২০২৪’ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান যাতে তুলে ধরা যায় সে লক্ষ্যে অংশীজনদের নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ) ও বাংলাদেশ এনজিও’স নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)।
তিনটি সেশনে জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা’র সঞ্চালনায় প্রথম সেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশ এর অধ্যাপক সামিয়া এ সেলিম। আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের প্রধান লুইস বারবার ও বিএনএনআরসি এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান। এই সেশনে আলোচনার বিষয় ছিল জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘আওয়ার কমন অ্যাজেন্ডা’ ও ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট’। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইজএফ এর সেক্রেটারী আবদুল হক অনু।
দ্বিতীয় সেশনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘সামিট অব দ্য ফিউচার ২০২৪’। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর গবেষণা ফেলো তাহরীন তাহরিমা চৌধুরী। আলোচক হিসেবে ছিলেন এএইচ এম বজলুর রহমান ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিল-উর-রহমান। সেশনটি সঞ্চালনা করেন টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
সমাপনী সেশনে আলোচনায় অংশ নেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিল-উর-রহমান ও সম্মানিত অতিথি ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার।