শিরোনাম
ঢাকা, ২ এপ্রিল ২০২৪ (বাসস) : নারী পুরুষের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
“বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করি, সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি”- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, নারীকে তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি সমাজ মানসে নারীর চিরায়ত রূপটি ভেঙে ফেলতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে পুরাতন অচলায়তনকে ভেঙে ফেলতে হবে। কারণ এর সাথে কেবল নারী নয়, সামাজিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিকসহ সামগ্রিক স্বার্থ জড়িত। সমকালীন সমাজ বিনির্মাণে মহিলা পরিষদের পাশাপাশি তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।
ড. নাসিম আক্তার নারীর কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে নারীর অবদান কে যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ ও মর্যাদা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শায়লা নাসরিন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সালমা আলী, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম-এর সঞ্চালনায় সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন মৃদুলা সমাদ্দার এবং কবিতা আবৃত্তি করেন আইটি অফিসার দোলন কৃষ্ণ শীল।
ড. শায়লা নাসরিন বলেন, নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য প্রকৃতির আরোপিত নয় বরং সাংস্কৃতিক-এই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক মানস পরিবর্তিত না হলে উন্নয়নকে টেকসই করা সম্ভব নয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লৈঙ্গিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তির পরিচয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী-পুরুষকে সম্পত্তিতে সমান অধিকার দিতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাংলাদেশে-অসাম্যতার বিরুদ্ধে একটা লড়াই চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ নারীদের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ নেই। রাষ্ট্র ও সমাজে নারীর জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হলেও সমাজ নারীকে তার প্রাপ্যটুকু দিতে চায়না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখা সত্বেও তাদের প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে। তিনি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ‘বৈষম্য’কে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হলে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে; নতুন প্রজন্মকে দৃশ্যমান করতে হবে। আইনজীবীদের সময়োপযোগী প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
তারুণ্যের প্রতিনিধি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি সামগ্রিকভাবে নারী আন্দোলনের সফলতা অর্জন করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন ।
মহিলা পরিষদের ঘোষণায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে নারীকে উন্নয়নের লক্ষ্য হিসেবে দেখার পরিবর্তে উন্নয়নের বাহন হিসেবে দেখার আহ্বান জানানো হয়।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর শক্তিকে বিকশিত করতে নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নারীর জীবনের মূল সংকট বৈষম্য। এই বৈষম্য চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে। তিনি লড়াকু নারীর জীবনে যে সাহস সঞ্চার হয়েছে তাকে সংগঠিত করে নারী আন্দোলনকে অন্তভর্’ক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।