শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে, ২০২৪ (বাসস) : ইউরোপ যাওয়ার লক্ষ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আজ দুপুরে দেশে পৌঁছেছে।
বিমানবন্দরের ৮ নং হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে বের করে মরদেহ গুলো একে একে তাদের পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়। এসময় বিমানবন্দর থানা পুলিশ, এপিবিএন পুলিশ, স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে মরদেহবাহী সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের (এসভি-৮০৮) নাম্বারের ফ্লাইটটি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশের এএসপি মো. মিজানুর রহমান বাসস’কে জানান, স্বজনরা মরদেহগুলো বুঝে পেয়ে যার যার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
এরআগে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) লিবিয়ায় নিযুক্ত ও তিউনিসিয়ার অনাবাসিক দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল অব আবুল হাসনাত মুহাম্মাদ খায়রুল বাশারের উপস্থিতিতে মিশনের কর্মকর্তারা মরদেহগুলো তিউনিস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্থান্তর করেন। এ ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়।
পুলিশ, ঘটনার বিবরণ, মামলা ও নিহতদের পরিবার সূত্র জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি অভিবাসী দল নৌকায় করে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে গেলে রাত সাড়ে ৪টার দিকে নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাটিতে মোট ৫৩ জনের মধ্যে ৫২ জন যাত্রী এবং একজন চালক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকিদের মধ্যে পাকিস্তানের ৮ জন, সিরিয়ার ৫ জন, মিসরের ৩ জন ও নৌকাচালক রয়েছেন। ওই ঘটনায় নৌকায় থাকা ৯ যাত্রী মারা গেছেন। এরমধ্যে ৮ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। নিহত অপর ব্যক্তি পাকিস্তানের নাগরিক।
সূত্র আরও জানায়, নিহত বাংলাদেশিরা হলেন- মামুন শেখ, সজল বৈরাগী, নয়ন বিশ্বাস, রিফাত শেখ, সজীব কাজী, ইমরুল কায়েস আপন, মো. কায়সার ও রাসেল শেখ। তাদের ৫ জনের বাড়ি মাদারীপুরে ও ৩ জন গোপালগঞ্জে।
এদিকে, ব্র্যাকের সহযোগি পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ওই নৌকায় থাকা আরও ১১ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে মাদারিপুর রাজৈর উপজেলার ২ জন ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের অভিযোগ, ওই ৮ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দর থানায় গত ১৯ এপ্রিল নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের দু’দিন পর আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহারে সুনীল বৈরাগী অভিযোগ করেন, তার ছেলে সজল বৈরাগী উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যেতে ইচ্ছুক ছিলেন। পূর্ব পরিচিত যুবরাজ কাজী (২৪) এবং লিবিয়ায় অবস্থানরত মোশারফ কাজী ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সজলকে বৈধ পথে ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সজল ও তার পরিবার এই প্রস্তাবে রাজি হন। গত বছর ১৭ নভেম্বর গোপালগঞ্জের বাসায় যুবরাজ কাজীর হাতে আড়াই লাখ টাকা এবং পাসপোর্ট দেন সজল। ৩০ ডিসেম্বর সজলকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের আগেই আরও ৫ লাখ টাকা নেন যুবরাজ কাজী। ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন সজল। এরপর ৮ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের বাসায় গিয়ে যুবরাজ কাজীর হাতে আরও সাড়ে ৬ লাখ টাকা দেন সুনীল বৈরাগী। এরপর থেকে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। পরে গণমাধ্যমে জানতে পারেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে লিবিয়া থেকে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা একটি ট্রলারে যে আট বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তার মধ্যে সজল রয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০ জনের একটা চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ওই ৮ জনকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেন।