বাসস
  ২৪ জুন ২০২৪, ২৩:৫০

পাকিস্তানের পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা বিষয় অন্তর্ভূক্তি বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ

ঢাকা, ২৪ জুন, ২০২৪ (বাসস) : ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা পাকিস্তানের পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার বিষয় অন্তর্ভূক্তি বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান প্রেসকøাবে আয়োজিত “ মৌলবাদের উত্থান: প্রভাব, চ্যালেঞ্জ ও হুমকি” বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এ পরামর্শ দেন।  
বেলজিয়াম ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা, গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস এবং সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ইউরোপ ভিত্তিক সংগঠন, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ  ফোরাম (ইবিএফ) গত ২৩ জুন রোববার এই সম্মেলন আয়োাজন করে।
সিনিয়র ডাচ রাজনীতিবিদ হ্যারি ভ্যান বোমেল ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন। এই সম্মেলনে তিনি বলেন, ৯/১১ হামলার কারণগুলি শুধুমাত্র আল-কায়েদা ও আফগানিস্তানের তালেবানদের দিকে তাকালে বোঝা যাবে না। পাকিস্তানে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পাকিস্তানের পাঠ্যসূচিতে মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার উপর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের উপর আরও চাপ দেয়া। তার মতে, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তান বিশ্বের জন্য আরও নিরাপদ ও ভালো স্থান হতে পারে।
ইবিএফ - যুক্তরাজ্যের সভাপতি আনসার আহমদ উল্লাহর সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন,
ডাচ পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য নিলস ফান ডেন বের্গ, ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কোঅপারেশন, ব্রাসেলস-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. তাজিন মুর্শিদ, বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি মিশন প্রধান প্রীতি রহমান,  বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন, সোশ্যাল সায়েন্স সেন্টার, জার্মানির পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ ফেলো ড. টমাস ভার্জিলি, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী প্রদীপ কুমার দত্ত, গ্লোবাল সলিডিারিটি ফর পিস এর চেয়ারম্যান এম এম মুর্শেদ, ইন্টারন্যাশনাল এইচআর কমিশন বাংলাদেশ-এর সুইজারল্যান্ডের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন এবং ইবিএফ নেদারল্যান্ডস এর সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়–য়া। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন তানিম চৌধুরী।
দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, মৌলবাদীরা হচ্ছে জনসংখ্যার  সেই অংশ যারা মৌলিক ধর্মীয় পথে যেতে চায় এবং তাদের ব্যাখ্যা-করা নিয়মাবলী রাষ্ট্র পরিচালনায় কঠোরভাবে অনুসরণ করতে চায়। তারা আক্রমনাত্মকভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিজস্ব ধর্মীয় অনুশাসন বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করে।
তারা বলেন, যার যার অবস্থান থেকে অবশ্যই যে কোন ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে। কারণ ধর্মীয় উগ্রতা খুবই স্পর্শকাতর এবং এর অপব্যবহার খুব দ্রুত উগ্র জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের  মৌলবাদী-উগ্রতা অতীতে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বজুড়ে
গণহত্যাসহ বিভিন্ন ধরণের নৃশংসতার জন্ম দিয়েছে ।
বক্তারা বলেন, উগ্র মৌলবাদীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় আইনের ব্যাখ্যা কঠোরভাবে মেনে চলার দাবি করে। তাদের ব্যাখ্যা আধুনিক বিশ্বের সাথে এবং কখনও কখনও দেশের সংবিধানের সাথেও সংঘাতপূর্ণ।
ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও  সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন লন্ডন থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বলেন, জামায়াতের শক্তিশালী মিত্র রয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা, ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) জামাতকে অর্থায়নে ও নানা সহায়তা করে থাকে এবং এক সময় তা সম্ভব হয়েছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে ইউকে, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন  দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।