বাসস
  ২৬ জুন ২০২৪, ২২:৫৮

প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে

সংসদ ভবন, ২৬ জুন, ২০২৪ (বাসস) : আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে রাখা হয়েছে। 
জাতীয় সংসদে আজ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি দল, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এ কথা বলেন। 
সংসদ সদস্যরা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, স্থানীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাবে এবং দেশ ও সমাজ গঠন নিশ্চিত করবে। 
তারা বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় অর্থবছর ২৫-এর জন্য ১,৩৬,০২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে বিএনপি-জামাত শাসনামলে এটি ছিল মাত্র ২২,০০০ কোটি টাকা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্থানীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং মূল্যস্ফীতি রোধের লক্ষ্য রাখা হয়েছে এবং এতে সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও একটি গবেষণা সংস্থাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক মহল দেশের অর্থনীতির তীব্র সমালোচনা করেছে এবং প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে অভিহিত করেছে।’ সংসদ উপনেতা প্রশ্ন রাখেন, ‘যদি অর্থনীতি সঠিকভাবে কাজ না করে। তাহলে কিভাবে দেশ ইতিমধ্যে ৩৩ তম বিশ্ব অর্থনীতির স্থান অর্জন করেছে?’
তিনি বলেন, বাজেটে বাংলাদেশকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশনা রয়েছে। কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, কর্মসংসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানকে আরও উন্নত করা এবং সাধারণ মানুষের চাহিদাপূরণের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অস্তিত্ব প্রবাহমান। 
সময়োপযোগী, সুচিন্তিত এবং বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জকৃত বাজেট উপস্থাপন করায় সংসদ উপনেতা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বলানী সংকট, সাপ্লাই চেইন বিপর্যয়, পণ্য পরিবহনে বাধা, বাজারে সকল পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভূরাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতি যে মন্দার কবলে, একথা আজ বলাই বাহল্য। 
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ডলারের মূল্যে অস্থিরতা সারা বিশ্বকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। মূল্যস্ফিতি, বেকারত্ব সমস্যায় বিশ্ববাসী আক্রান্ত। সফলতার সাথে করোনা অতিমারি মোকাবেলা করে সরকারের নানা প্রণোদনার ফল যখন আমরা ঘরে তুলছিলাম তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই সময়ে বাজেট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দেশকে অনেকটা স্বস্তি দিবে বলে আমি মনে করি।’ 
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ বাজেটের অর্থ হলো দেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে এবং জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার যখন বৃদ্ধি পায়, তার মানে ব্যবসায় সমৃদ্ধি আসছে মনে করা হয়। দেশের বাজেটের অংক যখন বৃদ্ধি পায় তখন এটিই বুঝায়, দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে, মজবুত হচ্ছে, দেশের মানুষ উপকার পাচ্ছে।’
দেশের অর্থনীতির অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় সহিংসতা এবং পৃথিবীর ৮০টির বেশি জায়গায় সংঘাত চলছে। এই সমস্ত কারণে সারা বিশ্ব এখন মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত। সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নানা উদ্যোগের কারণে আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতি পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় কম। 
সরকারি দলের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাজেটে চাল, গম ও ডাল আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা নি¤œ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের জীবিকা নির্বাহ অনেকটা সহজ করবে। 
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সরকারি দলের অপর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট করা হয়েছে। এই বাজেট অত্যন্ত সময়োপযোগী বাস্তবায়নযোগ্য একটি বাজেট।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শীর্ষক প্রস্তাবিত ৫৩তম বাজেট যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ৪.৬ শতাংশ বেশি, এটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে। 
এই বাজেট প্রস্তাবটিকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে উলে¬খ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বর্তমানে তা ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারায় সম্পদের সুষম বণ্টন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 
৯ শতাংশ ব্যাংক ঋণের সুদ হারের সিলিং তুলে দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটের লক্ষ্য ২৭ শতাংশ প্রাইভেট বিনিয়োগের যে লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার কারণে গতবছরের চেয়ে বিনিয়োগ কমবে এবং এতে খেলাপী ঋণের পরিমান অনেক বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, যেখানে ৯ শতাংশ সুদ দিয়েই ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না, সেখানে ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে।  
বিরোধী দলের আরেক সদস্য হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে যা সাধারণ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, বাজেটে রাজস্ব আয় অর্জন করা কঠিন হবে। কারণ সার, বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি। সরকারের চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, এটা পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। 
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সরকারি দলের সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, মজিবুর রহমান মজনু, ড. শ্রী বীরেন শিকদার, এনামুল হক বাবুল, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা, শরীফ আহমেদ, শাহজাহান ওমর, বি এম কবিরুল হক, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, এম, আব্দুল লতিফ ও কাজী নাবিল আহমেদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন। 
এর আগে তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।