বাসস
  ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩২

ব্রাহ্মণবড়িয়ায় পুরানো দেওয়ালে যে ক্যালিগ্রাফি প্রশংসায় ভাসছে

॥ মো.শফিকুল ইসলাম ॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : জেলার পুরানো ময়লাযুক্ত দেওয়াল পরিস্কার করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্যালিগ্রাফি প্রশংসায় ভাসছে দেশ ও বিদেশে।  তাদের ক্যালিগ্রাফি নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’। ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নামের দেয়াল লিখনটি করেছেন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উসাইদ মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদ ওমর। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরাতন ময়লাযুক্ত দেয়ালে এটি উৎকীর্ণ করেন। ওপরে শেওলা ধরা এবং নিচে পলেস্তারা খসে পড়া এ দেয়ালে রং তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিজয়। লাল দালান ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে স্বাধীনতার নতুন সূর্য।
জানা যায়, স্বাধীনতার নতুন সূর্য একেঁছেন উসাইদ মুহাম্মাদ একজন পেশাদার ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তিনি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়া কোরআনিয়া লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া মাহমুদিয়ায়। ২০১৮ সালে ক্যালিগ্রাফির জগতে পা দেন। রয়েছে একটি ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ একাডেমিও।
তার সাথে ছিলেন আরেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মুহাম্মদ উমর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা। ২০২০ সাল থেকে ক্যালিগ্রাফির জগতের সাথে সম্পৃক্ত। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসা তাকমিল জামায়াত বিভাগের শিক্ষার্থী। ক্যালিগ্রাফি উপর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে মুহাম্মদ উমর।
এদিকে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ ক্যালিগ্রাফিটি নজর কড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর মনে। আর সেই ক্যালিগ্রাফির নাম হচ্ছে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ  দেশ ও বিদেশে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ ছাড়াও দর্শনার্থীরা নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে প্রশংসামূলকভাবে ছবিটি প্রচার করছেন।
‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ সম্পর্কে  উসাইদ বলেন, ‘মূলত কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেখানে আমরা কিছু দুর্বৃত্তের বাধাঁর মুখে পড়ি। আমাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্র-জনতা আমাকে কাজটি করার আমন্ত্রণ জানায়। দেশের মানুষ আমার কাজ পছন্দ করায় খুবই ভালো লাগছে।
আরেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মুহাম্মদ উমর বলেন বলেন, ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ যে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে তার কারণ স্বাধীনতার সূর্যোদয় আমরা মাত্রই দেখতে পাচ্ছি। অঙ্কনের ভেতর যে ভাঙা দেয়ালটি রয়েছে সেটি হচ্ছে কিছু দিন পূর্বে যে আমাদের ওপর যে জরাজীর্ণ অবস্থা গিয়েছে, একটি অশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর সেই জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সূর্য উদয় হচ্ছে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত:
গত ৯ আগস্ট শুক্রবার বাদ আসর ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ চিত্রাঙ্কনটির কাজ শুরু করা হয়ে ছিল।  পরদিন ১০ আগস্ট শনিবার দুপুর ২টা নাগাদ অঙ্কনটির কাজ শেষ হয়েছে। ক্যালিগ্রাফিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুরো চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন-জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা, ব্যাপ্টিস্ট চার্জ, তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রকে চিত্রাঙ্কনটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এ অঙ্কনটিতে কোন কোনো বৈষম্য রাখিনি তারা। যেকোনো ধর্ম বা গোত্রের লোকজন চিত্রটির সামনে এসে ছবি তুলতে পারবে।