বাসস
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২০:০৪

চট্টগ্রামে অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালে চক্ষু চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু

চট্টগ্রাম, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সার্বিক সহযোগিতায় অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটাল দুই সপ্তাহব্যাপী চক্ষু প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু করেছে। এটি বাংলাদেশে অরবিসের ১১তম এবং চট্টগ্রামে পঞ্চমবারের মতো আয়োজন।

আজ ১৭ নভেম্বর রোববার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীস্থ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইমরান সেমিনার হলে প্রশিক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পঞ্চমবারের মতো চট্টগ্রামকে বেছে নেয়ার জন্য উড়ন্ত হাসপাতাল অরবিস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি। মেয়র চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও অববিসের যৌথ কার্যক্রমে স্বাস্থ্যসেবাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

সিআইআইটিসির প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা সেবাকারী প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিগত ২৫ বছর আগ থেকে কাজ শুরু করেছে। অরবিস বাংলাদেশে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিব ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকার পাশাপাশি সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আমি আশা করবো, অরবিস যেন তাদের মানবসম্পদ তৈরি ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যহত রাখে। 

আন্তর্জাতিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন বলেন, অরবিসের চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আজকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শিশুদের চিকিৎসায় উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিশুদের চোখের চিকিৎসায় প্রশিক্ষণে ধীরে-ধীরে বাংলাদেশের প্রায় ১৪টি হাসপাতালে নতুন ডিপার্টমেন্টেরে মাধ্যমে সম্প্রসারিত  হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য চিকিৎসক, নার্সরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- বাংলাদেশে ফ্লাইং আই হসপিটাল প্রজেক্ট আয়োজক কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ডা. মো. মুনিরুজ্জামান ওসমানী। বিশেষ অতিথি ছিলেন- অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকি। 

ডেরেক হডকি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সিইআইটিসির সহযোগিতায় বাংলাদেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল প্রকল্প আবারও শুরু করতে পেরে গর্বিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যালকন কেয়ার্স, অ্যালকন ফাউন্ডেশন এবং ফেডেক্সের সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অরবিসের লক্ষ্য একটি শক্তিশালী এবং টেকসই চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ, অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের ডিরেক্টর মরিস গ্যারি, সিইআইটিসি’র মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. রাজিব হোসেন। 

এর আগে সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহ্বুব খান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন- শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর। 

চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জনসংযোগ কর্মকর্তা শহীদ ফরুকী জানান, বাংলাদেশে চক্ষু সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এটি অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের একাদশ অবতরণ। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই প্রশিক্ষণ প্রকল্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৭ নভেম্বর থেকে এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নার্স এবং টেকনিশিয়ানগণ প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছানি, গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টি এবং কর্নিয়ার রোগের চিকিৎসা। এছাড়াও রয়েছে নিউরো অফথালমোলজি ওয়ার্কশপ, অপটোমেট্রি ওয়েবিনার, নার্সিং ও বায়োমেডিক্যাল সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ।

আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের জন্য অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের ভেতরে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, যা বিশ্বের একমাত্র সম্পূর্ণ স্বীকৃত বিমানভিত্তিক চক্ষু শিক্ষাদান হসপিটাল। অরবিসের ক্লিনিক্যাল স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবক বিশেষজ্ঞগণ (ভলান্টিয়ার ফ্যাকাল্টি) সারা দেশ থেকে আগত চক্ষু বিশেষজ্ঞদের হাতে-কলমে সার্জারি ও রোগী সেবা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। এর পাশাপাশি সিমুলেশন প্রশিক্ষণ ও চক্ষু কর্মশালার আয়োজনও করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্থানীয় চক্ষু সেবাদাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। 

অরবিস বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা করে, যা একটি এমডি-১০ বিমানের ওপর সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত চক্ষু শিক্ষার হাসপাতাল হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত।