বাসস
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০২

মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য যা ভালো তাই করবে বাংলাদেশ : মুখপাত্র

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি কয়েক সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের জান্তার কাছ থেকে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে।’

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবার সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঢাকা আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য এসেছে।

গত বছরের নভেম্বর থেকে, একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৩টির নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।

সর্বশেষ শুক্রবার আরাকান আর্মি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ঘোষণা করেছে যে, তারা কয়েক সপ্তাহের লড়াইয়ের পর অ্যানের পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কমান্ড ‘পুরোপুরি দখল’ করেছে।

চলতি মাসের শুরুতে রোহিঙ্গা বসতির কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ মংডু আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মি এখন বাংলাদেশের সাথে পুরো ২৭১ কিলোমিটার-দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে এবং রাখাইন রাজ্যের ‘কার্যকর’ কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠেছে।

সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আলম বলেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে আরও বিশদ বিবরণ দেননি।

গত রোববার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, তিনি তার মিয়ানমারের প্রতিপক্ষকে জানিয়েছেন যে, ঢাকা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সমস্যা সমাধানের জন্য আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না।

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক আলোচনা থেকে ফিরে ঢাকায় সাংবাদিকদের হোসেন বলেছেন, ‘আমি মিয়ানমারকে (ব্যাংককে) জানিয়েছি যে, সীমান্তটি এখন আর আপনাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি এখন আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাষ্ট্র হিসাবে, আমরা তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারি না। মিয়ানমারকে অবশ্যই সীমান্ত ও রাখাইন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্ভাব্য নতুন আগমন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে, মুখপাত্র আলম দেশে আরও বাস্তুচ্যুত লোকদের অনুমতি দেওয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আলম বলেন, মিয়ানমারের অবশিষ্ট ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে কতজন বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে তার কোনো সুস্পষ্ট হিসাব তাদের কাছে নেই।

এর আগে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হোসেন নতুন অনুপ্রবেশের আশঙ্কা নাকচ করলেও উদ্বেগের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে নতুন করে আর অনুপ্রবেশ ঘটবে, যদিও অনেকে উদ্বিগ্ন। আমরাও এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে আমাদের অবশ্যই এটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
 
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে, বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সামরিক দমন অভিযানের পর সেখানে পৌঁছেছে। গত সাত বছরে কোনো রোহিঙ্গা দেশে ফেরত যায়নি।