বাসস
  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৭

বোরো আবাদে ব্যস্ত হাওরাঞ্চলের কৃষকরা 

হাওরাঞ্চল, (নেত্রকোনা), ২৯ডিসেম্বর, ২০২৪(বাসস) : জেলার দশটি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা একেবারেই হাওরাঞ্চল। এ তিনটি উপজেলা হল, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন। এ তিন উপজেলায় বর্তমানে পুরোদমে চলছে বছরের প্রধান ফসল বোরো ধানের আবাদ। প্রতিদিনই তীব্র শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বোরো আবাদ করতে গিয়ে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। এছাড়া সার ও বীজসহ সকল প্রকার কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি কৃষকদের।

এদিকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাওরাঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। চলবে আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। কিন্তু শ্রমিক সংকট থাকায় এবার সময় মতো বোরো আবাদ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

এ বছর জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হাজার ৯৮০ হেক্টর, খালিয়াজুরী উপজেলায় ২০ হাজার ২৩০ হেক্টর এবং মদন উপজেলায় ১৭ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জেলার মদন উপজেলার হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা বীজতলা থেকে বোরো চারা উত্তোলন করে বস্তায় ভরে ফসলের মাঠে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার চারা রোপণের জন্য মই দিয়ে জমির উঁচু নিচু সমান করছেন। অনেকে জমিতে চারা রোপণের জন্য হাল চাষ করে জমি প্রস্তুত করছেন। ফসলি এসব জমিতে গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে পানি। কোথাও একা আবার কোথাও দলবদ্ধ হয়ে কৃষকদেরকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে। একই চিত্র হাওরাঞ্চলের অন্য দুই উপজেলা মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীরও।

মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, ভালোভাবেই বোরো আবাদ চলছে। তবে সব রকম কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবার চাষাবাদ ব্যয় অনেকটা বাড়ছে।

খালিয়াজুরী উপজেলার পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে পুরোদমে বোরো আবাদ চলছে। এখানকার বোরো ফসল নির্ভর করে ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর উপর। বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ সময় মতো সম্পন্ন হলে আগাম বন্যার কবল থেকে কৃষকদের হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা আগাম বন্যা দেখা দিলে ফসলহানির আশঙ্কা থাকে।

মদন উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ফসল উৎপাদনের সময় ধানের দাম কমে যায়। এতে উৎপাদন খরচ উঠাতেই হিমশিত খেতে হয়। ফলে ঋণের বোঝা বাড়ে। এখন আবার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর যেখানে ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বর্তমানে দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ায় প্রতি একর জমিতে সেচের খরচও বেড়েছে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। জেলার ৪৩ হাজার কৃষককে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে দুই কেজি করে হাইব্রীড ধান বীজ প্রদান করা হয়েছে। এ বছর বোরো আবাদে কৃষকদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।