শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কন্টেন্ট চুরি রোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেছেন, ছবি, ভিডিও ও সংবাদ চুরি করা দেশের মিডিয়া শিল্পের জন্য বড় হুমকি।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপক কন্টেন (বিষয়বস্তু) চুরি থেকে আমাদের সংবাদ আউটলেট ও সাংবাদিকদের রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে ইউনিয়নগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। বিষয়বস্তু চুরির বিরুদ্ধে নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদেরও ব্যাপক প্রচার চালানো উচিত।’ তিনি আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে এ কথা লেখেন।
শফিকুল আলম জানান, সম্ভব হলে তারা সফটওয়্যার ও অ্যাপে বিনিয়োগ করতে পারে, যা সহজেই চুরি শনাক্ত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যদি কোনো নিউজ আউটলেট থেকে অন্য কোনো আউটলেট বা কোনো ফটোগ্রাফার ও ভিডিও সাংবাদিকের বিষয়বস্তু চুরির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে সতর্ক করা উচিত। ফের এই অপরাধের জন্য তাকে আদালতে বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তি দেয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোকেও এ আউটলেটগুলো বয়কট করা উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকতাকে নৈতিক ও দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে। তবেই আমরা আমাদের হাজার হাজার সাংবাদিককে কম বেতন থেকে রক্ষা করতে পারব।’
কনটেন্ট চুরি রুখে দিয়ে ভালো সাংবাদিকতা করার আহ্বান জানিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘জার্নালিজমকে দাম দিতে হবে। কনটেন্টের দাম দিতে হবে। কারা কারা কনটেন্ট চুরি করে বের করুন। আমাদের এটা জানা দরকার। তাদের কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিকরা ভালো বেতন পাচ্ছেন না। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ফাইন্যান্সিয়াল মডেল হচ্ছে না। যারা অরিজিনাল কনটেন্ট করবেন, তাদেরকে বাংলাদেশে প্রটেকশন দরকার।’
গ্লোবাল নিউজ এজেন্সি এএফপি-তে থাকার সময় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শফিকুল আলম বলেন, ২০২৩ সালে এএফপি একটি সফটওয়্যার নিয়ে এসেছিল, যাতে নিউজ আউটলেটগুলো বেআইনিভাবে সংস্থাটি’র কোন ছবি মুদ্রণ করলে, তা ধরে ফেলা যায়। এটি একটি গেম চেঞ্জার ছিল।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমে আমরা সনাক্ত করতে পারতাম যে, কে এএফপি’র ছবি চুরি করছে। আমরা বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ আউটলেটে এ সফটওয়ারটি চালিয়ে দেখতে পেলাম যে, তাদের প্রত্যেকেই হাজার হাজার ডলার মূল্যের এএফপি ছবি চুরি করছে। আমরা যথাযথভাবে এই আউটলেটগুলোকে নোটিশ পাঠাই। এদের অনেকে তা মেনে নিয়েছে, অনেকে আমাদের গ্রাহক হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া আউটলেটগুলো অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা, প্রতিদিনের সংবাদ সংগ্রহ ও ব্রেকিং নিউজে প্রচুর বিনিয়োগ করে। তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে প্রতিকূল পরিবেশে ফটো ও ভিডিও শ্যুট করার জন্য ফটোগ্রাফার ও ভিডিও সাংবাদিকদের পাঠায়।
প্রেস সচিব বলেন, জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ক্রিকেট সিরিজ কভার করতে ১০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হতে পারে এবং টেকনাফ ও কুতুপালংয়ে একটি গল্প কভার করতে একজন রিপোর্টারকে পাঠাতে হাজার হাজার ডলার ব্যয় হতে পারে।
তিনি বলেন, একবার এই নিউজ আউটলেটগুলি এই সংবাদ বিষয়বস্তুগুলো প্রকাশ করলে, ব্যাঙের ছাড়া মতো গড়ে ওঠা হাজার হাজার অনলাইন আউটলেট সেই খবরগুলো চুরি করে পুনঃপ্রকাশ করে। একটা বিষয় নিয়ে বারবার বলছি, সেটা হলো কনটেন্ট প্রটেকশন। আমরা চাই যে, আপনি যে কনটেন্টটা করলেন, সেটা যেন প্রটেকটেড থাকে। সেটা যেন তাৎক্ষণিক আরেকটা বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-ভাতিজা বা মামা-ভাগ্নে ডটকম টাইপের যে ওয়েবসাইট রয়েছে, তারা যেন এই কনটেন্টটা চুরি না করে।’
শফিকুল আলম বলেন, এটি শিল্পের ওপরও ক্ষতিকর বা দুর্বল প্রভাব ফেলে এবং সাংবাদিকদের মজুরি কমাতে এটি একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো নিউজ আউটলেট তরুণ রিক্রুটদের বলতে পারে যে, তাদের মাসিক মজুরি হিসাবে ৫০০০ টাকা নেয়া উচিত। কারণ তারা জানে যে, তারা প্রতিদিন শত শত খবর চুরি করতে পারে এবং এখানে দায়মুক্তির সংস্কৃতি রয়েছে।’
এ ব্যাপারে প্রেস সচিব বলেন, ‘সবাইকে বলেছি, এটা (কনটেন্ট প্রটেকশন) নিয়ে সোচ্চার হোন। জার্নালিজম ইজ অ্যা এক্সপেনসিভ থিং। এটার কস্ট আছে। আমি একটা জার্নালিস্ট নিলাম ৫ হাজার টাকা দিয়ে। নিয়ে সারাদিন ভরে চুরি করলাম। এই জার্নালিজম আমরা চাই না। এদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে।’