জামায়াতের সমাবেশের জন্য প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা

বাসস
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১৮ আপডেট: : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪১
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লোকারণ্য হতে শুরু করেছে। ছবি: জামায়াতে ইসলামীর সৌজন্যে

ঢাকা, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ আজ। এজন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সকাল ১০টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল রাত থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, জুলাই গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারসহ 'সাত দফা' দাবিতে এই জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে জনসমাগম বাড়ছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে আগত নেতা-কর্মীদের মাঝে। স্বতঃস্ফূর্ত, বাধাহীন অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর দলের জাতীয় এ সমাবেশ স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সমাবেশস্থলের সব প্রস্তুতি গতকালই (শুক্রবার) শেষ করেছে দলটি। মাঠের চারপাশে টানানো হয়েছে ব্যানারু-ফেস্টুন, মঞ্চের সামনে সাজানো হয়েছে সারি সারি চেয়ার, টয়লেট ও পানির কলসহ জায়ান্ট স্ক্রিন সবই প্রস্তুত।

সরেজমিন দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের সামনে গতকাল রাতেই জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। তাদের কারো পরনে জামায়াতে ইসলামীর লোগো সংবলিত টি-শার্ট। কারো মাথায় বাঁধা দলীয় সাদা ফিতা। আবার কেউ কেউ এনেছেন দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও। রাতে মঞ্চের সামনে ত্রিপল বিছিয়ে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীদের অনেকেই সেখানে শুয়ে-বসে রাতে সময় কাটান। কেউ দিতে থাকেন দলীয় স্লোগান। এশা ও ফজর নামাজ সেখানেই আদায় করেন তারা।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন আবু কাউছার। সমাবেশের মূল মঞ্চের পাশেই বসে ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী আসবেন। ঢাকার পাশের জেলা হওয়ায় এ সংখ্যা আরো বেশিও হতে পারে। তিনি তার কয়েক বন্ধুসহ সমাবেশের আগের রাতেই এসেছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তুতি দেখতেই মূলত আগেভাগে চলে আসা বলেও জানান।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা থেকে এসেছেন ইউসুফ হোসেন। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবো ভেবে ভীষণ ভালো লাগছে। রাতে মাঠেই ছিলেন তিনি।

সমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে এসে গতকাল জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর হামদ ও নাত পরিবেশন করা হবে। আর মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা ২টায়। 

তিনি আরো রবলেন, সমাবেশস্থলে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকা শহরের বাইরে থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য কমপক্ষে ১৫টি পার্কিং পয়েন্ট রাখা হয়েছে। সারা দেশ থেকে রাজধানীতে মানুষের ঢল নামবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে এমন রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজনকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রশাসনিক সমন্বয়কারীদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক বালু ছিটানো, চেয়ার বসানো, টয়লেট ও পানির কল স্থাপন, জায়ান্ট স্ক্রিনের তার সংযোগসহ নানা কাজে ব্যস্ততায়। মাঠজুড়ে পানি অপসারণের জন্য ফেলা হয়েছে বালু ও কংক্রিট, ছিটানো হয়েছে ব্লিচিং পাউডার। সুশৃঙ্খল ও গোছানো একটি মহাসমাবেশ উপহার দিতে সর্বাত্মক মনিটরিং করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, গতকাল সন্ধ্যার মধ্যেই মাঠের প্রস্তুতি চূড়ান্তভাবে শেষ করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় এক মাস ধরেই আমরা মনিটরিং করছি। আবহাওয়া কিছুটা দুর্যোগপূর্ণ হওয়ায় মাঝে মধ্যেই পানি নিষ্কাশন, ইট ফেলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয়েছে।

মাঠে দায়িত্বপালনরত স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, তৈরি করা হয়েছে ৫ শতাধিক অস্থায়ী টয়লেট। ওজুর জন্য ১ হাজারেরও বেশি ব্যবস্থাগ্রহণ ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট স্থাপন করা হয়েছে। অগণিত নেতা-কর্মী ও সমাবেশে আগত সাধারণ মানুষের অসুবিধা যেন না হয়, তা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকাজুড়ে রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হলেও যেন সমাবেশে অংশগ্রহণকারী মানুষের কষ্ট না হয়, সে জন্য আমাদের কর্মীরা সব ব্যবস্থা নিয়েছেন। নিরাপত্তা, সেবাপ্রদান ও শৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। মঞ্চের দু’পাশে থাকছে দুটি বড় জায়ান্ট স্ক্রিন এবং সমাবেশের আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ ৫০টিরও বেশি পয়েন্টে বসানো হয়েছে এলইডি স্ক্রিন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাজুড়ে ৪শ’টির বেশি মাইক বসানো হয়েছে। অতিথি ও নেতাদের বসার জন্য মঞ্চের সামনের দু’পাশে রাখা হয়েছে ৬শ’ চেয়ার।

মাঠের ভেতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক মনিটরিং সেল। দলে ৬ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক ৮টি বিভাগের আওতায় কাজ করবেন বলে জানানো হয়েছে। 

যাতায়াত ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। ঢাকার বাইরের বাসগুলোর ড্রপিং পয়েন্ট নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনা তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীরা বিশেষ ট্রেনে চড়ে সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। এসেছেন সড়ক ও নৌপথেও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
টি-টোয়েন্টির সাফল্য ধরে রাখার লক্ষ্যে কাল পাকিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করায় ডিএমপিতে ১৩৫৬ মামলা
গুরুতর সাইবার হামলার কবলে সিঙ্গাপুর
এমআইএসটিতে আইসিএমইএএস বিষয়ক ৩য় আন্তর্জাতিক সম্মেলন সমাপ্ত
কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু
পঞ্চগড়ে ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচি
রায়েরবাগের একটি নির্জন স্থান থেকে বাটন ফোনে সাংবাদিকদের কাছে নয় দফা দাবির বার্তা পাঠাই: আব্দুল কাদের 
শেরপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ
পেন্টাগনের সিস্টেমে চীনা কারিগরি সহায়তা বন্ধ করল মাইক্রোসফট
সুনামগঞ্জে ভারতীয় রুপিসহ একব্যক্তি আটক
১০