ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত নির্মিত দেশের প্রথম পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনটি আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে চালু হতে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীদের সহায়তায় নির্মিত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই তেল পাইপলাইনটি আগামী ১৬ আগস্টের দিকে চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তারা বলেন, এই পাইপলাইনের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এই পাইপলাইন ব্যাপক অর্থ সাশ্রয় করবে এবং চুরি ও সিস্টেম লস উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্বে তেলবাহী ট্যাংকারে পরিবহনের সময় তেল লোড এবং আনলোড করার দু’টি পর্যায়েই সিস্টেম লস হতো’।
উপদেষ্টার বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে বিপিসি কর্মকর্তারা বলেন, এই পাইপলাইন পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।
তারা জানান, পাইপলাইনের ২৪১ কিলোমিটার অংশে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হয়েছে, যা পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। পাশাপাশি, গোদনাইল থেকে ফতুল্লায় স্থাপিত ডিপো পর্যন্ত ৮.২৯ কিলোমিটার পৃথক ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বিপিসি’র একজন কর্মকর্তা জানান, ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইন ২২টি নদী ও খালের নিচ নিয়ে এসেছে এবং পুরো রুটে মোট ৯টি পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন’ নামে একটি অনুরূপ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানি করা হয়।
বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সমুদ্র থেকে অপরিশোধিত তেল আনলোড করার জন্য আরেকটি পাইপলাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে।
তারা জানান, পূর্বে তেলবাহী ট্যাংকারে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত তেল পরিবহনে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ৪ ঘণ্টায় তেল পৌঁছানো যাবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহনে বিপিসির বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাইপলাইন চালু হলে খরচ হবে মাত্র ৯০ কোটি টাকা। ফলে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ পাইপলাইন তেল চুরি ও অপচয় রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে মাঝে মাঝে তেল পরিবহন বিঘ্নিত হতো এবং সরবরাহে সমস্যা দেখা দিত। এ পাইপলাইন চালু হলে এই সমস্যা দূর হবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, যারা পাইপলাইনের পরিবহন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এসসিএডিএ (সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন) নামক একটি কম্পিউটারাইজড সিস্টেম স্থাপন করেছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ টন পেট্রোলিয়াম প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১০ লাখ টন ভারত থেকে পাইপলাইনে আমদানি করা হয়। আর বাকি অংশ চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী ট্যাংকারে পরিবহন করা হয়।
গত ২৪ জুন এই পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলক তেল পরিবহন সফল হয়েছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপোতে বিপিসির তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান ট্যাংক থেকে সরবরাহকৃত তেল গোদনাইল ডিপোতে কোম্পানিগুলোর ট্যাংকে পৌঁছাবে।