মো. আমিনুল হক
সুনামগঞ্জ, ২৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। মানবিক মূল্যবোধের এ মানুষটির বর্ণাঢ্য জীবনে সখ্যতা ছিলো বিপ্লবী ভাবাপন্ন মানুষদের সাথে।
আর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এমন বিপ্লবী ভাবাপন্ন সুনামগঞ্জের সাংবাদিক ফজলুল হক সেলবর্সী। কবি নজরুলের বিপ্লবী মানস গঠনে তাঁর প্রভাব ও ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ফজলুল হকের আদর্শ জাতীয়-বীর আনোয়ার পাশা ও জগলুল পাশা কবি নজরুলের কবিতায় বীরত্বের প্রতীকরূপে চিত্রিত হয়েছেন। নজরুল তাঁর এক কবিতায় ‘জগলুল মম ফজলুল হক’ পংক্তির মাধ্যমে স্পষ্টতই ফজলুল হককে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ-পুরুষ মিশরের জগলুল পাশার স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন।
আর এই মহান ব্যক্তিকে সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিশ ১৯৬৭ সালের ২৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি (শহীদ জগৎজ্যোতি লাইব্রেরি) হলে ফজলুল হক সেলবর্সীকে এক সাড়ম্বর গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল।
আজীবন অকৃতদার ফজলুল হক সেলবর্সী ১৯৬৮ সালের ৮ নভেম্বর নিজ গ্রাম সেলবরসে তাঁর মৃত্যু হয়।
সাংবাদিক, লেখক ও বিপ্লবী রাজনীতিক। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস গ্রামে ১৮৯৩ সালে তাঁর জন্ম। স্থানীয় সিংধা মাইনর স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। শৈশবে মাতা-পিতাকে হারিয়ে ফজলুল হক অসহায় হয়ে পড়েন এবং তাঁর পড়াশুনা ব্যাহত হয়। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলে ১৯১৫ সালে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ফজলুল হক কলকাতায় চলে যান। সেখানে ১৯১৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি রিপন কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু অচিরেই তিনি কলেজ ত্যাগ করে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হয়েছিলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সমাজের বিদ্যমান অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি তার কবিতায় তুলে ধরেছেন-
‘আমি দুর্বার
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার
আমি অনিয়ম উচ্ছৃংখল
আমি দলে যাই বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল’.....
তিনি শুধু শোষণ ও বঞ্চনা দূর করতে চেয়েছেন তা নয়, বরং তাঁর বিদ্রোহী ও সাম্যবাদী চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ গঠনের আহ্ববান জানিয়েছেন।
তিনি তাঁর কবিতায় দেখিয়েছেন যে মানুষের হৃদয়ই পবিত্রতম স্থান, যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ নেই এবং যেখানে সকল মানুষের প্রতি সমদৃষ্টি থাকে, সেখানেই পৃথিবী সুখের আবাসস্থল হতে পারে। কবি নজরুল সকল প্রকার ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং মানবতাকে সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।
তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষণ ও সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতাসহ অন্যান্য লেখায় তিনি অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। নজরুল দেখিয়েছেন কিভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় এবং তাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হয়। এক কথায় নজরুল ছিলেন বৈষম্যহীন একটি সুন্দর সমাজ ও মানবিকতার মূর্ত প্রতীক, যা তাঁর সাহিত্য ও লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।