কুমিল্লা ইপিজেডে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, রপ্তানীতে রেকর্ড

বাসস
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৪৯ আপডেট: : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ২০:০৯
কুমিল্লা ইপিজেড। ছবি: বাসস

\ কামরুল হাসান \

কুমিল্লা, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে এসে এ ইপিজেড দেশের অন্যতম সফল শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, যার মধ্যে ৬৬ শতাংশ নারী।

২৬৭ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই ইপিজেডে রয়েছে ২৪৩টি প্লট, যার সবগুলোই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জায়গা নেই। তবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে, বাড়ছে উৎপাদন ও রপ্তানি।

ভোর থেকেই হাজার হাজার শ্রমিকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কুমিল্লা ইপিজেডের প্রবেশ পথ। কারখানার ভেতর যন্ত্রের অবিরাম শব্দ আর শ্রমিকদের কর্মতৎপরতায় জমজমাট পুরো শিল্পাঞ্চল। করোনার ধাক্কা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে এই শিল্পাঞ্চল আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্ডার বেড়েছে, রপ্তানি হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

বেপজার (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯০২.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য-যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ।

গত পাঁচ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী-২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫৬৫.৮৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮১৪.৮২ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ সালে ৭৯০.৯৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩-২৪ সালে ৭১১.৩৭ মিলিয়ন ডলার এবং চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০২.২২ মিলিয়ন ডলারে।

অন্যদিকে, বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। এখন পর্যন্ত কুমিল্লা ইপিজেডে মোট বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানে কর্মরত আছেন ২৭০ জন বিদেশি কর্মকর্তা।

বেপজার তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা ইপিজেডে তৈরি পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স, প্লাস্টিক ও ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে, যা রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ১৫টি দেশের বিনিয়োগকারীরা এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

প্রতিমাসে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা বাবদ গড়ে খরচ হয় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এ বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানীয় বাজারে ঘুরে কুমিল্লা ও আশপাশের অর্থনীতিকে করছে প্রাণবন্ত।

ইপিজেডের শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই এখন আত্মনির্ভর জীবনের প্রতীক। দেবিদ্বার উপজেলায় শ্রুতি টেক্সটাইলে কর্মরত সাবিনা আক্তার বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। এখন সিনিয়র অপারেটর হিসেবে আছি। আমার বেতনে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলছি, সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারছি।’

ব্র্যান্ডিক্স টেক্সটাইলে কর্মরত খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি থেকে আসা মেমং মারমা বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী দু’জনই এখানে চাকরি করি। গ্রামে বাবা-মাকে খরচ পাঠাতে পারি, এখানেও সংসার ভালোভাবে চলছে।’

এখানকার বিনিয়োগকারীরাও আশাবাদী। তাদের মতে, সরকারের সহায়তা ও বেপজার উদ্যোগে করোনা পরবর্তী সময়ে রপ্তানি অনেক বেড়েছে। তবে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে বিদেশি ক্রেতাদের যাতায়াত সহজ হবে এবং নতুন বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

বেপজা কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘বর্তমানে কোনো খালি প্লট নেই। তবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসারণ হচ্ছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগ তেমন না বাড়লেও রপ্তানি ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থান হওয়ায় কুমিল্লা ইপিজেড এখন জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নতুন প্লট সম্প্রসারণ বা স্যাটেলাইট ইপিজেড গড়ে তোলা যায়, তবে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্বিগুণ হবে এবং রপ্তানিতেও নতুন রেকর্ড তৈরি হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পিবিপ্রবিতে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
আলিম পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল রোববার
টেস্টে চতুর্থবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের
আগামী এক মাসের মধ্যে সিরাজগঞ্জে মডেল মাদ্রাসার বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে : ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
মাদারীপুরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত
ভোলার গ্যাস দিয়েই নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হবে : শিল্প উপদেষ্টা
কৃষি গুচ্ছ ভর্তির আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, পরীক্ষা ৩ জানুয়ারি
জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজে প্রাক্তন ক্যাডেটদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ও ৪৭ রানে জিতল বাংলাদেশ
মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার
১০