
\ বাবুল আখতার রানা \
নওগাঁ, ১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার আমন ধানসহ শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকার ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সরিষা, ফুলকপি, আলু, পেঁয়াজের বীজতলা, গাজর ও অন্যান্য সবজির জমি। এতে স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কার্তিক মাসে সাধারণত হালকা বৃষ্টি হয়। তবে এ বছরের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক।
এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি।
কোথাও সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে বেশিরভাগ জমিতেই পানি জমেছে। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মূলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যে-সব ক্ষেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকেরা। এ ছাড়াও মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে। গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। যে-সব জমিতে আগাম আলু বপন করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় রোপণ করা আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আলু চাষিদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ ছাড়াও রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজিরও ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলার মান্দা উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক অমল চন্দ্র সরকার বাসসকে বলেন, ‘গত ২৫-৩০ বছরে কার্তিক মাসে এত বৃষ্টি দেখিনি। প্রবল বৃষ্টিতে আমার কয়েক বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।’
মান্দা উপজেলার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর ভাল লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেন কৃষকরা। তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমে। বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে অনাবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পানি দ্রুত না নামলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকেরা।
তিনি আরো বলেন, ধান সবে পাকতে শুরু করেছিল। এখন গাছ নুয়ে পড়ে পানির নিচে গেছে। বোরো ধানে ক্ষতির পর এবার আমন চাষেও লোকসান গুনতে হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল এলাকার কৃষক রতন মোল্লা বাসসকে বলেন, সবেমাত্র আলুর বীজ রোপণ করেছি।
এরই মধ্যে বৃষ্টি। এখনও মাঝে মাঝে আকাশ মেঘে ঢেকে আসছে। ঝিরঝির করে বৃষ্টিও পড়ছে। মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নওগাঁ সদর হাপানিয়া এলাকার সুশীল মিস্ত্রি বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে গেছে। এখনো ফসলের ক্ষেতে অনেক পানি জমে আছে। দ্রুত পানি সরাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।
পত্নীতলার কৃষক সালেহ মামুন বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে গেছে। এখনো ফসলের ক্ষেতে অনেক পানি জমে আছে। দ্রুত পানি সরাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বাসসকে বলেন, হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে আমন ধান ও সবজি চাষে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। যে-সব জমিতে আলু লাগিয়ে ৮-১০ দিন হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হবে না। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ধানের জন্য বৃষ্টি কিছুটা আশীর্বাদ। ক্ষেত থেকে পানি সরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি জানান, জেলায় এবছর আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।