
।। বিপুল ইসলাম।।
লালমনিরহাট, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে লালমনিরহাটে থেমে থেমে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী ও হালকা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে নুয়ে পড়েছে ও অনেক সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট, মহেন্দ্রনগর, হারাটি, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, পঞ্চগ্রাম ও বড়বাড়ীসহ আদিতমারী ও কালিগঞ্জ উপজেলার ফসলি মাঠে আধাপাকা ও পাকা ধান হেলে পড়েছে। কৃষকেরা ফসল রক্ষায় পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন। আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন ও মুলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি নুয়ে পড়ে গোড়ায় পচন ধরেছে। হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামেও একই পরিস্থিতি বলে জানা গেছে।
আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের কৃষক মমিনুল হক বলেন, এবার কিছুটা দেরিতে রোপা আমন আবাদ করেছিলাম। এখন ফুল থেকে থোর আসছে। এমন সময় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে ফসল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।
একই উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, দমকা হাওয়ার কারণে আমারসহ অনেকের জমির সবজি গাছগুলো হেলে পড়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কৃষক নাদের হোসেন জানান, ধানক্ষেতের পাশাপাশি সবজির ক্ষেতেও পানি ঢুকেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ধান সব হেলে পড়েছে, এখন ক্ষতির ভয় পাচ্ছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, বৃষ্টি ও বাতাসে নুয়ে পড়া ধানগাছগুলো গোছা করে বেঁধে দিলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব। যেসব জমিতে পানি জমেছে, সেসব জায়গা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করলে ক্ষতি অনেকটা রোধ করা যাবে।
তিনি আরও জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তাই মাঠপর্যায়ে কৃষকদের ফসল রক্ষায় নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, এই মৌসুমে ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৮৫ হাজার ৩৫০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। বৃষ্টির পানি নেমে গেলে ধানগাছের নুইয়ে পড়া অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যেসব ধানের শীষ সোনালি রঙ ধারণ করেছে, সেগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা কম।
তিনি আরও বলেন, টানা বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেতে পানি জমেছে। এখনো বড় ক্ষতি না হলেও বৃষ্টি আরও কয়েকদিন স্থায়ী হলে মুলা ও আগাম জাতের সবজি পচে যেতে পারে।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।