বাকৃবি ক্যাম্পাসে শীতের উষ্ণতায় কুয়াশা, পিঠা আর স্মৃতির মিষ্টি গল্প

বাসস
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৫
ছবি : বাসস

তানিউল করিম জিম

ময়মনসিংহ (বাকৃবি) ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): প্রতি বছর শীতের আগমন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে যেন একটু আলাদা আবহ নিয়ে আসে।

ক্যাম্পাসে শীতের উষ্ণতায় কুয়াশা, পিঠা আর স্মৃতির মিষ্টি ঘ্রাণে মন ভরে যায়। প্রকৃতিই আগে ভাগে জানিয়ে দেয় তার আগমনী বার্তা। সকালে ক্লাসে যেতে যেতে পথের ধারে চোখে পড়ে ঝরা শিউলি ফুল। মনে হয় কেউ যেন সাদা ফুলের এক মনোরম কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে। ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশির পা ভিজিয়ে দেয় অবচেতনেই।

সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় চারপাশ কুয়াশায় ঢেকে থাকে, রাস্তার পাশে ভাপা পিঠার দোকানগুলোতে তখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। কেউ সকালের নাস্তায় গরম গরম ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা মুখে দিয়ে ছুটে যায় ক্লাসের দিকে, আবার কেউ কেউ এসব গরম পিঠা প্যাকেট করে নিয়ে যায়। 

বিকেল হতেই পাল্টে যায় ক্যাম্পাসের দৃশ্যপট। কে. আর (কামাল রঞ্জিত) মার্কেট কিংবা ঈশা খাঁ হলের সামনে একের পর এক পিঠার দোকান বসে। ভিড় যেন কমার নামই নেয় না। কেউ ক্লাস শেষে সরাসরি পিঠার দোকানে, কেউ বা হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয় আড্ডা দিতে। শীতের ঠান্ডা হাওয়ার মাঝে ধোঁয়া ওঠা পিঠার স্বাদ যেমন মন ভরায়, তেমনি মনে করিয়ে দেয় শৈশবের স্মৃতি।

সেই ছোটবেলায় ডিসেম্বর এলেই শেষ হতো বার্ষিক পরীক্ষা। আর পরীক্ষা শেষ মানেই দাদু বাড়ি, নানু বাড়ির পথে যাত্রা। সেখানে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত কুয়াশায় মোড়া গ্রাম। নানু, দাদুর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসত পিঠার মনভোলানো গন্ধ। সবাই গোল হয়ে বসে গরম পিঠা খেতে খেতে আড্ডায় মেতে থাকত। কেবল খাবার নয়, পিঠা ছিল পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে থাকার আনন্দ, ছিল পরিবারকে ঘিরে এক উষ্ণতার প্রতীক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে সেই স্মৃতির কিছুটা আবার ফিরে আসে এই পিঠাপুলির দোকানগুলোতে। ভিন্ন পরিবেশ হলেও উষ্ণতার অনুভূতি একই রকম। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বাতাসে শীতের হালকা ঘ্রাণ, সাথে ভাপা পিঠার ধোঁয়া ওঠা, সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় ভাপা পিঠা, চিতই, পাটিসাপটা, ঝাল পিঠা, মিষ্টি পিঠাসহ বিভিন্ন স্বাদের পিঠা। চিতই পিঠার মধ্যে আবার দুধ চিতই, আবার ডিম চিতইয়ের মতো থাকে ভিন্নতা। কেউ কেউ নিজের গ্রামের বিশেষ রেসিপি এনে দোকানিদের দিয়ে বানিয়ে নেয় নানা স্বাদের পিঠা—ফলে স্বাদেও আসে নতুনত্ব।

শীতের সন্ধ্যায় পিঠা খাওয়ার পর গরম চায়ের প্রয়োজনীয়তা যেন আরও বেশি করে অনুভূত হয়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ হাঁটছে, কেউ আড্ডায় মগ্ন। চা না হলে যেন পিঠার আনন্দ পুরোপুরি পূর্ণতা পায় না।

প্রায় দিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজন করে “শীত উৎসব” বা “পিঠা উৎসব”। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাজিয়ে নিয়ে আসে নিজেদের হাতে বানানো পিঠা, কেউ পাটিসাপটা, কেউ দুধপুলি, কেউ আবার খেজুর গুড়ের মুড়ির মোয়া। এক জায়গায় এত বৈচিত্র্যময় পিঠার মহড়া যেন বাংলার সংস্কৃতিরই এক রঙিন প্রতিফলন।

এসব পিঠার দোকান শুধু খাবারের স্থান নয়। এগুলো শীতের গল্প, বন্ধুত্বের বন্ধন ও স্মৃতির উষ্ণ ঠিকানা। প্রতিটি পিঠার স্বাদে থাকে ক্যাম্পাস জীবনের ছোঁয়া, রেশ থাকে স্মৃতির মিষ্টি গন্ধ।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বসে যখন ভাপা পিঠা খাই, তখন মনে হয় যেন শীত মানেই উষ্ণতা, শীত মানেই পিঠা আর স্মৃতির মিষ্টি ঘ্রাণ।

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী লিখন বলেন, শীত এলেই আমার দিনের একটা অংশ হয়ে যায় এই পিঠার দোকানগুলো। প্রায় নিয়মিতই এখানে এসে পিঠা খাই। ব্যস্ত ক্লাস-টিউটোরিয়ালের মাঝে গরম ভাপা পিঠা হাতে নিলেই যেন ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এই পিঠার স্বাদ শুধু খাবার নয়, মনে হয় উষ্ণ একটা অনুভূতি। যা আমাকে প্রতি দিনই টেনে আনে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, শীতের হাওয়া আর ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠা। এগুলো মিলেই ক্যাম্পাসের শীতকে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় করে তোলে।

শীতের এই পিঠার মৌসুম শুধু স্বাদ-উৎসবই নয়। তৈরি করে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও। ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর পিঠা, কেক বা শীতকালীন অন্যান্য খাবার নিয়ে অনেকেই ছোট পরিসরে দোকান বসায়। অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা এসব উদ্যোগ থেকে তারা ভালোই আয় করতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস শেষে ভিড় জমালে বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ। এতে যেমন শীতের আমেজ বাড়ে, তেমনি অনেক তরুণের হাতখরচ। আর এতে আয় বা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম পদক্ষেপও তৈরি হয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস কাল
৪টি হাসপাতালের সঙ্গে বিজিএমইএ’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
জাবির ভর্তি পরীক্ষা: প্রতি আসনে লড়বেন ১১৯ শিক্ষার্থী
রাঙ্গামাটিতে ৬ দিনব্যাপী পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় মেলা শুরু
সিডনিতে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হচ্ছে চেলসি-টটেনহ্যাম
যুব হকি বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার্স কাপ জেতায় হকি দলকে ঢাবি ছাত্রদলের অভিনন্দন
রিয়ালের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনের ইঙ্গিত আলোনসোর
উন্নয়ন কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজন নগর সরকার : চসিক মেয়র
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কখনো থামা উচিত নয়: তারেক রহমান
পরিবারসহ সাবেক এমপি তানভির শাকিলের ৮৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
১০