বাসস
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২১
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২২

পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য মহাসড়কের পাশে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : সড়ক দুর্ঘটনা রোধে টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের চারটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসহ বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই অংশ হিসেবে দেশের প্রথম পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমসারে ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দু’টি অত্যাধুনিক বিশ্রামাগার।
এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগারের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন এই বিশ্রামাগার দু’টির সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র বলছে, বিশ্রামাগার চালু হলে দেশের সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমে যাবে এবং মহাসড়ক হবে নিরাপদ।
জানা যায়, দেশের মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে দূরপাল্লার পণ্যবাহী চালকদের কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হয় এসব আধুনিক বিশ্রামাগার। আধুুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দ্বিতল বিশিষ্ট বিশ্রামাগার দু’টিতে চালকদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকবে। মনোমুগ্ধকর বিশ্রামাগার দু’টি চালু হলে বিশ্রামগারে দূরপাল্লার পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। উদ্বোধনের পর প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক ইজারার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে সওজ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলরত দূরপাল্লার পণ্যবাহী যানবাহন চালকরা সড়কে একটানা ৫ ঘন্টার বেশি গাড়ি চালানোর ফলে চালকদের একঘেঁয়েমিসহ ঘুম-ঘুমভাব তৈরি হয়। এতে মহাসড়কে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগারগুলো নিমার্ণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এসব বিশ্রামাগারে দূরপাল্লার ট্রাক চালকরা বিশ্রাম নেয়ার জন্য দ্বিতল শয়নকক্ষে চালকদের রাত্রিযাপন, পণ্যবাহী গাড়ি পার্কিং, বিনোদন পয়েন্ট, ক্যান্টিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ, গাড়ি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ, ওয়াশজোন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা, দু’টি লেক, সবুজায়ণ ও নিরাপত্তা প্রাচীরে সীমিত আকারে খেলার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যাতে চালকরা এসব বিশ্রামাগারগুলো বিশ্রাম নিয়ে সহজেই দূরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। উক্ত ঝুঁকি নিরসনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার চালু হলে দূরপাল্লার ট্রাক চালকদের বিশ্রাম নেয়ার সুবিধা হবে। ফলে তাদের রাত্রিযাপনের সমস্যাসহ ভ্রমণজনিত কান্তি ও অবসাদ নিরসন সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়কের দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। মহাসড়ক হবে নিরাপদ। এই বিশ্রামাগার স্থাপনের মাধ্যমে গাড়ি চালকদের মানসিক ও শারীরিক উৎকন্ঠা দুরীভূত করে আবারও তারা পরিপূর্ণভাবে গাড়ি চালনায় মনোনিবেশ করতে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মাগুড়া জেলায় চারটি বিশ্রামাগার স্থাপন করা হচ্ছে। এইসব আধুনিক চারটি বিশ্রামাগার তৈরী করতে সরকারের ২২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. আমান বিশ্বাস বাসসকে বলেন, আধুনিক বাস টার্মিনালটি নির্মাণে যাবতীয় মান বজায় রেখে কাজ করা হয়েছে। এখন এসব বিশ্রামগারে শেষ মূহুর্তের কাজ চলছে।
এদিকে মহাসড়কের পাশে সরকারি এমন স্থাপনা নির্মাণে খুশি দূরপাল্লার পণ্যবাহী চালকরা। তারা বলছেন- সরকারের এই উদ্যোগের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কে দুঘর্টনা কমে যাবে। চালকরা নিবির্ঘেœ যাতায়াত করতে পারবে।
দূরপাল্লা সড়কে নিয়মিত চলাচলরত ট্রাক চালক আলমগীর স্বপন বলেন, প্রধান সড়কে নির্ধারণ করা গাড়ি পার্কিং করার কোন জায়গা নেই আমাদের। তাই আমরা বাধ্য হয়েই এতদিন মহাসড়কেই পাশে গাড়ি রেখে বিশ্রাম নিতে হতো। এখন বিশ্রামাগারটি চালু হলে আমরা বিশ্রাম নিতে পারবো। বিশ্রামের ফলে আমাদের শরীরও ভালো থাকবে আমাদের গাড়িও নিরাপদে থাকবে। অপর চালক মমতাজ উদ্দিন বলেন, সরকার ভবনটি আমাদের জন্য নির্মাণ করায় এখন বিশ্রাম নেয়া যাবে এবং সড়কে দুর্ঘটনাও কমে যাবে বলে জানান তিনি।
কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই বিশ্রামাগারটি চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে এবং যান চলাচলে স্বস্তি ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমিত চাকমা বলেন, ভবন নির্মার্ণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানে শুধু গাড়ি পার্কিং ও বিশ্রামগার নয় এখানে গাড়ি মেরামতের জন্য সুযোগ সুবিধাও থাকবে। এখানে খাওয়া গোসল এবং নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পার্কিংয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, দেশের চারটি জাতীয় মহাসড়কের চারটি স্থানে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় চারটি বিশ্রামাগারের মধ্যে দুইটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিজস্ব ভূমিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭৮তম কিলোমিটারে কুমিল্লার নিমসার নামক স্থানে এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ১০৯তম কিলোমিটারে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়া নামক স্থানে নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আরোও দু’টি বিশ্রামাগার ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মিত হবে যার একটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাগুরার লক্ষ্মীকান্দর নামক স্থানে এবং অপরটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১২৮ তম কিলোমিটারে হবিগঞ্জ জগদীশপুর নামক স্থানে নির্মাণ করা হবে।