বাসস
  ০৩ জুন ২০২৪, ২১:২০

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা বিশ্বময়, ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন অন্তঃসারশূণ্য, দেশবিরোধী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা, ৩ জুন, ২০২৪ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব এবং এর অন্য কর্তাব্যক্তিরাসহ সারাবিশ্ব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করছে, তাদের নিয়ে ডয়েচে ভেলের নেতিবাচক প্রতিবেদন অন্তঃসারশূণ্য, দেশবিরোধী।
আজ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। গত ২৭ থেকে ২৯ মে এন্টিগায় ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের চতুর্থ সম্মেলনে যোগদান এবং ৩০ ও ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিইউয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ধারাবাহিক সভা শেষে রোববার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেন ড. হাছান মাহমুদ। এসব বিষয়ে জানাতেই আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাংবাদিকরা ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ অবদান রাখা বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী নিয়ে ডয়েচেভ্যালে একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন করেছে’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনের সারমর্ম বোঝা বড় মুশকিল, কারণ কোনো তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তা করা হয়নি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের অবদানকে খাটো করার জন্য সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডয়েচে ভেলে মাঝেমধ্যেই এমন প্রতিবেদন করে যা দেশের স্বার্থবিরোধী এবং দেশকে 'আন্ডারামাইন' করে। সেজন্য ঠিক ডয়েচে ভেলে নয় বরং সেখানে কিছু বাঙালি আছে তারা এগুলোর সাথে যুক্ত। বড়কথা, ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনটি অসার, অন্তঃসারশূন্য, সেখানে সাবস্ট্যানটিভ কিছু নেই।’
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করছে। জাতিসংঘ মহাসচিব তার সাথে সাক্ষাতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, শান্তিরক্ষী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরাও আমাদের বাহিনীর দক্ষতার প্রশংসা করেছেন এবং এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬৯ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে দায়িত্বপালনকালে আত্মদান করেছেন, সেটিও বিশ্বময় অত্যন্ত সম্মানিত হয়েছে।
হাছান মাহমুদ অভিমত ব্যক্ত করেন, ‘যেখানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের বিশ্বময় প্রশংসা হচ্ছে, সেখানে ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনের কোনো মূল্য নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ‘বিএনপির সাম্প্রতিক প্রচারণা- জিয়াকে হত্যায় গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে’- এ নিয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পেছনে জিয়াউর রহমান ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল। সে কারণেই খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। এটি কোন গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান নয়। জিয়াউর রহমানই মূলত গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আর জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে তার লোকেরাই।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যাকা-ের পর সাত্তার সাহেব রাষ্ট্রপতি ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া সোয়া দশ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তারা কেন জিয়া হত্যার বিচার করল না?
তিনি বলেন, ‘তারা নিশ্চয়ই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে বলেই জিয়া হত্যার বিচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমানই গণতন্ত্রের হত্যাকারী।’
বিএনপির অপর মন্তব্য ‘বেনজীর-আজিজ আওয়ামী লীগ সরকারের সৃষ্টি’ নিয়ে প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দুদক অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ফলে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে বিধায় এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার।
‘দুর্নীতি দমন কমিশন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন তলব করেছে কিন্তু তাকে দেশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বেনজীর আহমেদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তিনি যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন। ৬ জুন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে উপস্থিত হন কি না, নাকি তিনি সময় নিচ্ছেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এর আগে সাম্প্রতিক সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৭ থেকে ২৯ মে এন্টিগায় ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের (সিডস) চতুর্থ সম্মেলনে ও সেখানে ইউএন গ্রুপ অভ ফ্রেন্ডস অন ভিশন সম্মেলনে যোগদান, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও জ্যামাইকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘে কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের বিষয়ে জানান।
এরপর ৩০ ও ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিইউয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, মিয়ানমার বিষয়ে মহাসচিবের বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এবং জাতিসংঘের ৬ উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পৃথক ধারাবাহিক সভা, রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে ব্রিফিং এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস অভ্যর্থনা ও নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান বিষয়ে আলোকপাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান।