শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শিশু হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র যোবায়িত হোসেন ইমন (১২) নামে এক শিশুকে র্যাবের সাঁজোয়া হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট রাজেশ চৌধুরির আদালতে নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভুইয়া বাদি হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজহারটি গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহা পরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) ড. খ মহিউদ্দিন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন আর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্যগণ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই আসামীদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমনের (১২) বাম কানের উপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নীচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন, মামলার বাদি ও অন্যান্য সাক্ষিরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমন্ডিস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামীরা শেখ হাসিনার অবৈধ স্বৈরশাসনকে নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘায়িত করার প্রয়াসে পরস্পরের সাথে পরামর্শক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল ও হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনার সর্বময় কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা অধস্তন পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সহ অন্যান্য বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। সেই আলোকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নীল নকশা বাস্তবায়নের নিমিত্তে পৈশাচিক হত্যাকান্ড শুরু করে। এতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র, শিশু, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা ও আহত করে।
হত্যাকারী বাহিনীগুলো খুন এবং আহত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং আহতদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালসমূহে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বাধা দেয় এবং হাসপাতালে ডাক্তারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
এছাড়াও আসামীদের নির্দেশে বাহিনীগুলোর সদস্যরা হাসপাতালগুলোতে ঢুকে নিহতদের অনেকের মৃতদেহ জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলে। ফলে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জোরপূর্বক অনেক মৃতদেহ নিয়ে কোন রকম পোস্টমর্টেম ছাড়াই অজ্ঞাত লাশ হিসেবে বিভিন্ন কবরস্থানে গোপনে দাফন করে হত্যাকান্ডের প্রমাণ বিনষ্ট করে। একইভাবে তারা বাদির ভাগ্নে জোবাইদ হোসেন ইমন এর মৃতদেহ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করে।