বাসস
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:০১
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:০৭

শহিদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করবে মন্ত্রণালয়

॥ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে গণঅভ্যুত্থানের বীর শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
একইসাথে বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। দেশের তরুণ প্রজন্মসহ পর্যটন শিল্পের নিবিড় এবং টেকসই উন্নয়নে দেশের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ‘পর্যটন সপ্তাহ’ ও ‘পর্যটন মাস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেবে পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান আজ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের আজ  বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস’কে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পর্যটন মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করেছে বিটিবি। যার লক্ষ্য  হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫.৫৭ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ এবং এই খাতে ২১.৯৪ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
বিটিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই পরিকল্পনায় ১০টি মূল পর্যটন ক্লাস্টার বিকাশের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি খাতে ১.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
পর্যটন সচিব বলেন, দেশের মোট জিডিপির শতকরা প্রায় তিন শতাংশ এই শিল্প থেকে আসে। সরকারও পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে ‘ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ রফিউজ্জামান বলেন, ১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, ২০২৩ সাল নাগাদ এ সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২৭০ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। এই বছর প্রায় ১৪০ কোটি পর্যটক সারা বিশ্বে ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।    
তিনি বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বেড়েছে। পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পর্যটনকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকা-ও উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।’ তবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য ট্যুর অপারেটর পরিষেবার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বাংলাদেশের পর্যটন সম্প্রসারণে তারুণ্যের কার্যকর প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। জাতিসংঘ বিশ্বপর্যটন সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত এবছরের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন শান্তির সোপান’। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ড এর সুযোগ-সুবিধার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডের মূল চালিকাশক্তি তারুণ্য। তারুণ্যের শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। তারুণ্যের কার্যকর প্রয়োগ পর্যটন শিল্পের ইতিবাচক ও গুণগত পরিবর্তন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাপী পর্যটনের প্রচার ও প্রসারে ১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের পর্যটন বিষয়ক সংস্থা ঘোষিত এ দিবসটি সকল সদস্য দেশে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বৈচিত্রময় নদ-নদী, বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক দৃশ্যের পাশাপাশি জনসাধারণের বৈচিত্রময় জীবনধারাসহ পর্যটন সম্প্রসারণের নানাবিধ অনুসঙ্গ রয়েছে বাংলাদেশে।
তারা বলেন, শান্তি বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় পর্যটন অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। পর্যটনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি ও মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় সমঝোতা ও বন্ধুত্ব। যুদ্ধের অনুপস্থিতি শুধু শান্তি নয়; সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে পর্যটনের ভূমিকা অপার। 
পর্যটন শুধু এককভাবে সরকারের কাজ নয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনসাধারণ এর মূল অংশীদার। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।  বাসস’র সাথে আলাপকালে তারা জানান, ইতোমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের পর্যটন অনেক দূর এগিয়েছে। 
এদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ব পর্যটন দিবস যথাযথভাবে উদযাপনের কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়েছে।