শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণের ক্ষমতায়ন ও অংশীদারিত্বের রাজনীতি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সময় আমরা তথাকথিত উন্নয়নের রাজনীতি দেখেছি। কিন্তু সেই রাজনীতির ভিত্তি ছিল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন। অন্যদিকে জনগণের ভোটে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, আপনারা দেখতে পাবেন, আমাদের ৩১ দফার আলোকে, জনগণের ক্ষমতায়ন ও অংশীদারিত্বের রাজনীতি। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা।’
তারেক রহমান আজ বৃহষ্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা: ৩১ দফার আলোকে সংস্কার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যাতে পুনরায় উত্থন না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে কেউ পরপর দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে। আমরা আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই।’
তারেক রহমান বলেন,‘আমরা সবাই এমন দেশ গড়তে চাই, যেখানে আর কখনো ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। আমরা সবাই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নেবে না। আমরা সবাই একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে, নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করবে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারিত্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও, স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে নিশ্চিত করা হবে যে, কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা যদি একটি রুলস-বেসড রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সারা পৃথিবী থেকে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পাবলিক সেক্টরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।’
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে, বিএনপি সরকারের সময়,বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, কার্টুন আঁকতে পারতো।
তারেক রহমান বলেন, ‘কিন্তু গত ১৬ বছরে আমার নিজের, আমার দলের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা আপনাদের অনেকের ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অফ এসোসিয়েশন সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সকল নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো, ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ১৬ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেপ্তার এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জনগণের ভোটে বিএনপি নির্বাচিত হলে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এইসব বিষয় নির্মূল করার।
তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে নিশ্চিতের চেষ্টা করা হবে।
তারেক রহমান বলেন, অতীতের মতোই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এবারও বন্যার সময় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি ও সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত পরিবারগুলোকে আন্তরিক সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে। ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে জনসম্পৃক্ত ও সমাজবান্ধব রাজনীতিকে।
বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এত বিশাল সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অপরাধে জড়িত হলে, তা জানামাত্রই আমরা দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পরে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল, পুলিশের অনুপস্থিতি ছিল। সেই সময়ে দলীয়ভাবে বিএনপি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশকে আগলে রেখেছে। নিশ্চিত করেছে জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে না জড়িয়ে সহিংসতাকে প্রতিহত এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশেও তথাকহিত সংখ্যালঘু হিসেবে আমরা কাউকে বিবেচনা না করে, নাগরিকের সমান অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিএনপির নীতি। জাতীয়তাবাদের আদর্শই বিএনপির রাজনীতি। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম, দল ও মত যার যার-তবে রাষ্ট্র সবার।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,‘আমাদের ৩১ দফা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে, আকাঙ্ক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, বিএনপির জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই আমাদের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে; অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সঞ্চয় নিশ্চিত হবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।’
তারেক রহমান বলেন, পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে ৩১ দফাকে সংযোজন, বিয়োজন, পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তবে তা হবে অংশীজনের পরামর্শ ও জনমতের ঐক্যের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, সময়ের সাথে এ ৩১ দফাই একদিন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তথা সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনের দ্বার উন্মোচন করবে, যা বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে সাফল্যমণ্ডিত, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানবসম্পদে সমৃদ্ধ, এবং সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে।
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কেবল ক্ষমতায়ন নয়। বরং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এবং জনগণের অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশও এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকে আমরা যারা এখানে সমবেত হয়েছি, দেশে-বিদেশে আমরা যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সবসময় ভাবি; আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর ধরে এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ ছাড়াও অনেক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী - তাঁদের সকলের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে; প্রতিটি শ্রেণী-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে - একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সমন্বিত অগ্রাধিকার।’