বাসস
  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৫৮

কিয়েভে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি পুতিনের

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভের ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রগুলো' লক্ষ্য করে রাশিয়ার তৈরি নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন।

ইউক্রেনের এক বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর মস্কোর দফায় দফায় হামলার পরে পুতিন এ হুমকি দিলেন। ওই হামলায় ১০লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, রাশিয়া ৯০ টিরও  বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১০০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের  হামলার জবাবে তিনি এই নতুন হামলা চালিয়েছেন।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রায় তিন বছরব্যপী চলমান এ যুদ্ধের তীব্রতা সাম্প্রতিক দিনগুলোয় উভয় পক্ষের নতুন নতুন অস্ত্র ব্যবহারের কারণে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে পুতিন কাজাখের রাজধানী আস্তানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা কিয়েভসহ সামরিক, সামরিক-শিল্প বা সিদ্ধান্তগ্রহণ কেন্দ্রগুলোর ওপর ওরেশনিকের ব্যবহার বাতিল করিনি।'

কিয়েভের রাজধানীর এক এলাকার একাধিক সরকারি ভবনসম্বলিত একটি সরকারি এলাকা কঠোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষিত হলেও গত সপ্তাহে  সেখানেও আতঙ্ক বেড়েছে।

রাশিয়া গত সপ্তাহে ইউক্রেনে তার নতুন ওরেশনিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা প্রসঙ্গে পুতিন বৃহস্পতিবার জানান, একসাথে বেশ ক’টি অস্ত্র নিক্ষেপ একটি পারমাণবিক হামলার সমতুল্য।

আস্তানায় পুতিন বলেন, ওরেশনিক  যে  কোনো কিছুকে ‘ধুলায় পরিণত করতে পারে’ এবং ‘সূর্যপৃষ্ঠের’ মতো প্রচণ্ড উত্তাপ নিয়ে আঘাত করতে পারে।

তিনি বলেন, এটিএসিএমএস ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে কিয়েভের প্রথম হামলার পর রাশিয়াকে ‘যুদ্ধের পরিস্থিতিতে (অস্ত্র) পরীক্ষা করতে’ বাধ্য করা হয়েছে।

পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, ওরেশনিক ‘প্রতি  সেকেন্ডে প্রায় তিন কিলোমিটার’ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

ক্রেমলিন প্রধান বলেন, রাতের হামলা ছিল ‘আমাদের ভূখণ্ডে (মার্কিন) এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা অব্যাহত হামলার জবাব।’ তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমাদের পক্ষ  থেকে সব সময় জবাব আসবে।’

মস্কো গত সপ্তাহে দিনিপ্রো শহরে তার নতুন ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে পশ্চিম ও কিয়েভকে হতবাক করেছে। এদিকে রাশিয়ান কর্মকর্তারা অস্ত্রের শক্তির কথা বলেছেন।

পুতিন আরও দাবি করেন যে রাশিয়া জানে কিয়েভকে কতগুলো দূরপাল্লাার অস্ত্র দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো ঠিক কোথায় রয়েছে।

প্রায় তিন বছরের যুদ্ধে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনীয়রা যখন একটি কঠিন শীতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এসব হামলা হয়।

পুতিন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ওপর আশাবাদ ব্যক্ত করে বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তি’ অভিহিত করে স্পষ্ট কোনো কিছুর ইঙ্গিত না দিয়ে বলেন, ট্রাম্প সমাধান খুঁজে পেতে সক্ষমতা রাখেন। 

রাতের বেলা দফায় দফায় হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিম লভিভ অঞ্চলে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরে রাশিয়ান নেতা একথা বলেন।

কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিম রিভন অঞ্চলে আরও ২ লাখ ৮০ হাজার এবং উত্তর-পশ্চিম ভলিন অঞ্চলে ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।

ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবাগুলো বলেছে, রাশিয়ার রাতের বেলার হামলা দেশটির পশ্চিমে হার্ড হিট অঞ্চলসহ সারাদেশের ১৪ টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

জেলেনস্কি , রাশিয়ার  ‘গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র’ নিক্ষেপের উল্লেখ করে একে ‘রাশিয়ান সন্ত্রাসী কৌশলের অত্যন্ত জঘণ্য বৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করেছেন।

মার্কিন  প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন এই হামলা জানুয়ারিতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার আগে কিয়েভকে সহায়তার অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে।

বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই হামলা আপত্তিকর এবং এটি ইউক্রেনের জনগণকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষায় সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের আরেকটি স্মারক হিসাবে কাজ করবে।’

রাজধানীতে এএফপি সাংবাদিকরা রাতের বেলায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এবং স্থানীয়রা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে রাশিয়ান ড্রোন ও  ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে ভূগর্ভস্থ মেট্রো সিস্টেমে ভিড় করে। 

জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি এই বছরের ইউক্রেনের বেসামরিক শক্তি অবকাঠামোতে রাশিয়ার এগারোতম বড় হামলা।

জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  রোজমেরি ডিকার্লো এই মাসে সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলা এই শীতকে ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে কঠোর’ করতে পারে।

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক কিয়েভে হামলার পুতিনের হুমকি একটি ‘দুর্বলতার প্রমাণ’ উল্লেখ  করে বলেন, পশ্চিমারা তার কথায় নিবৃত্ত হবে না।'