ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বৃহস্পতিবার সপ্তম দিনে গড়িয়েছে, আর এদিনও দুপক্ষ আবারও হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো—
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের বেরশেভা শহরের সোরোকা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে হাসপাতালটিতে আগুন ধরে যায়, এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক শ্লোমি কোদিশ।
তিনি বলেন, 'একাধিক ওয়ার্ড পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, হাসপাতালের সর্বত্র ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'
ইরান বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশে থাকা সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি বলেছে, 'আন্তর্জাতিক আইনে হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।'
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেন, 'বেসামরিক মানুষদের কোলাটেরাল ডেমেজ হিসেবে বিবেচনা করা দুঃখজনক।'
খামেনিকে হুমকি ও নেতানিয়াহুর ঘোষণা
হাসপাতাল হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক হুমকি ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য।'
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ আরও এগিয়ে গিয়ে বলেন, 'আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ীকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না।'
তিনি দাবি করেন, খামেনি ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতাল হামলার নির্দেশ দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য বলেন, তারা খামেনেয়ীর অবস্থান জানেন, তবে 'এখনই তাকে হত্যা করা হবে না।'
ইরাকের শীর্ষ শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ আলি সিস্তানি হুঁশিয়ার করেন, 'ইরানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতার ওপর আক্রমণ পুরো অঞ্চলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ
ট্রাম্প বুধবার বলেন, তিনি ইসরাইলের পাশে যুদ্ধ জয়ে যুক্ত হবেন কি না তা বিবেচনা করছেন, তবে 'ইরান সমস্যায় আছে, তারা সংলাপে আসতে চাইছে।'
শুক্রবার জেনেভায় ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে পরমাণু আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ট্রাম্প আক্রমণ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন, তবে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি ছাড়ে কি না তা দেখছেন।
ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল হুঁশিয়ার করেছে, 'যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের নির্বোধ প্রেসিডেন্ট ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”্'
রাশিয়া এটিকে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, এবং ইরানঘনিষ্ঠ ইরাকি গোষ্ঠীগুলো পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে।
বৈরুতে মার্কিন কূটনীতিক টম ব্যারাক বলেন, 'হিজবুল্লাহ যদি এই যুদ্ধে জড়ায়, তবে তা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত।'
পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে হামলা
ইসরাইল দাবি করেছে—তারা ইরানে আরাকের একটি নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক চুল্লি এবং নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা ইরানের অর্ধেকের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস করেছি।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বিশ্বের চেহারাই পাল্টে দিচ্ছি।'
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস বলেছে, তারা ইসরাইলে একশটির বেশি ‘যুদ্ধ ও আত্মঘাতী ড্রোন’ পাঠিয়েছে।
গ্রেপ্তার ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ
ইরানি পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ রয়েছে।
ইসরাইল ও ইরান—উভয় দেশই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছে।
নরওয়ে-ভিত্তিক এনজিও ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’ বলেছে, ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে অন্তত ২২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তারা মনে করছে, আসল সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।