পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফল : তদন্ত কমিশন

বাসস
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৫:২২ আপডেট: : ২৫ জুন ২০২৫, ২১:০৭
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন বুধবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। 

পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও আলামত ধ্বংস করার প্রয়াস প্রতীয়মান হয়েছে। এর পিছনে দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

আজ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনের সপ্তম তলায় আয়োজিত তৃতীয় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। এ সময় কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে কমিশন। মোট ১৫৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে কমিশন। আরও প্রায় ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে। 

তদন্ত কমিশন বেঁচে যাওয়া অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি থেকে পিলখানার অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর ঘটনার বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে। এতে অফিসারদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। নারী ও শিশুদেরকে মারধর, সশস্ত্র অবস্থায় হুমকি প্রদান, বাড়িঘর ভাংচুর, অমানবিক পরিবেশে খাবার ও পানি ছাড়া কোয়ার্টার গার্ডে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা, রাষ্ট্রের ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধ্বংস সাধন, আলামত ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগ ছাড়াও নানা ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। 

শহীদ পরিবারের ৬ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সকল শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুইটি সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে পরিবারের সদস্যগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। সম্মেলনে সকল ইচ্ছুক সদস্যদেরকে লিখিত বা কমিশনে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জবানবন্দি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

বেঁচে ফিরে আসা অফিসারদের ১৫ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারের লিখিত জবানবন্দি প্রদান করার জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুইটি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।

আট জন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের জবানবন্দি  নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের  সাক্ষাতকার জেলে নেয়া হয়েছে। তিন জন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দুই জন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন।

৫৫ জন সামরিক অফিসার, যারা বিভিন্নভাবে পিলখানা ট্র্যাজেডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদের  জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সাবেক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।


২০ জন অসামরিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, আমলা ও পূর্বতন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ।

এছাড়া তৎকালীন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি নয় জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, যাদের কাছে ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয় কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জন বিডিআর সদস্যের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, সে সম্পর্কে নানা ধরণের তথ্য দিয়েছে যেগুলো এখন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আরো সাক্ষাতকার গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

২৯ জন কারামুক্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে। সর্বমোট ১৫৮ জনের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে এবং আনুমানিক আরো ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে।

ছয়টি দেশের দূতাবাস ও ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।  

এছাড়া কমিশন বিভিন্ন উৎস থেকে অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ফরেনসিক অ্যানালিসিস করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় প্রেরণ করা হয়েছে।

কমিশন ইতোমধ্যে বিজিবি’র ঘটনাস্থল, ডিজিএফআই ও র‌্যাব সদরদপ্তর পরিদর্শন করে নানাবিধ দলিল-দস্তাবেজ ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

২৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় কমিশন তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩১৬টি পত্র প্রেরণ করেছে, যার মধ্যে ১০৯টির উত্তর পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য কমিশন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয় সেনাবাহিনী পরিচালিত কোর্ট অব ইনকোয়েরির মূল প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে এবং আরো তদন্ত চলমান রয়েছে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠির কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে।

তৎকালীন বিডিআর এর বিভিন্ন ইউনিট পরিচালিত কোর্ট অব ইনকোয়েরির ৫৭টি তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। 

কিছু বিদেশী দূতাবাস ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, যার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো বাংলার জমিনে রয়ে গেছে : অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন
সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: শারমীন এস মুরশিদ 
দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩, আক্রান্ত ৪২৮
সংসদ নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ে মতবিনিময় করতে রংপুর যাচ্ছেন সিইসি
রাফিউস সাজ্জাদ বাপাউবো প্রকৌশলী সমিতির কমিটির আহ্বায়ক
ওএসডি হওয়া ৭৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি
বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্ম উপদেষ্টা / সারাদেশে বেহাত ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান শুরু হচ্ছে : ধর্ম উপদেষ্টা 
‘মওদূদীর ইসলাম’ বলে স্বতন্ত্র কোন ইসলাম নেই: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
ভ্যান্স ২০২৮ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন 
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পত্র 
১০