ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি না হওয়ায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) কাঠামো এবং এর নাম পরিবর্তন করে 'সাংবিধানিক, বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি' করার ব্যাপারে দ্বিতীয় দফায় আলোচনার ষষ্ঠ দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে শুরু হয় এ বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আলোচনার পূর্বে প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা জানান।
তিনি জানান, সংশোধিত এ কমিটিতে সভাপতিত্ব করবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার। প্রস্তাবিত এ কমিশনের সদস্য থাকবেন সাতজন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, নিম্ন ও উচ্চকক্ষের স্পিকারদ্বয়, বিরোধী দলীয় নেতা, অন্য যেকোনো দলের একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন কর্মকর্তা। এবং এতে সভাপতিত্ব করবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার।
তিনি আরো বলেন, এর আগে এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি থাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশোধিত ও নতুন প্রস্তাবিত এই কমিটিতে তারা থাকবেন না। কমিটির কাজ হবে অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিন বাহিনীর প্রধানের নিয়োগ ব্যতীত অন্যান্য সকল সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এ সময় জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ প্রস্তুত করার তাগিদ জানিয়ে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সবার সহযোগিতায় দ্রুত একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বক্তব্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কি কি বিষয় হবে সেটি নিয়েও আজ আলোচনার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, রোববার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কি হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের মত পার্থক্য তৈরি হয়।
এদিন কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির বিষয়ে প্রায় সব দল একমত প্রকাশ করলেও বিএনপি, জামায়াতসহ ডান ও মধ্যপন্থি দলগুলো পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে যোগ করা ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করার, ও সিপিবি, বাসদসহ কিছু বামপন্থী রাজনৈতিক দল বিদ্যমান চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সঙ্গে কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতি যুক্ত করার প্রস্তাব করে। এক্ষেত্রে এনসিপি বাহাত্তরের সংবিধানে রাখা চার মূলনীতি রাখার সম্পূর্ণ বিপক্ষে মত দেয়।
ফলে সেদিন অমীমাংসিত থেকে যায় বিষয়টি, যা নিয়ে আজ আরো বিশদ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আজ দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাবার আগে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, এ সকল বিষয়ে আলোচনা চলছে। অধিকতর আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে।
উল্লেখ্য আজকের আলোচ্য সূচিতে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, নারী আসনসহ আরো বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়।
আজ রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি, জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।