উলিপুরের হাতিয়া গণহত্যা দিবস: দাগারকুটিতে ৬৯৭ মানুষের প্রাণহানি

বাসস
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৯
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: বাসস

শফিকুল ইসলাম বেবু

কুড়িগ্রাম, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ১৩ নভেম্বর, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি গ্রামে নির্বিচারে হত্যা করে ৬৯৭ নিরীহ মানুষকে। 

স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ৩২ দিন আগে সংঘটিত এই হত্যাযজ্ঞ উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যাগুলোর একটি হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৭১ সালে এদিন রমজানের রাতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের তথ্য পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দাগারকুটি, অনন্তপুর, বাগুয়া, রামখানা, নয়াদাড়া, মণ্ডলের হাট ও নীলকণ্ঠসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে হামলা চালায়।

রোজাদার মানুষ তখন কেউ সেহরি খেয়ে বিশ্রামে, কেউবা ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় চারদিক থেকে শুরু হয় বৃষ্টির মতো গুলি ও মর্টার শেলের হামলা। মুহূর্তেই গ্রামজুড়ে আগুন, লুটপাট আর চিৎকারে তটস্থ হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্র তীরের এলাকাটি।

নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুরা ধানক্ষেত, ঝোপঝাড় কিংবা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করেও রক্ষা পাননি। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা নারী-পুরুষদের ধরে এনে দাগারকুটি গ্রামে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি চালায়।

এরপরও মৃত্যু নিশ্চিত করতে নিহতদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন এলাকাবাসী মিলে ৬৯৭ জন শহীদের দগ্ধ মরদেহ সংগ্রহ করে গণকবর দেয়। 

গণকবর ও মূল স্মৃতিস্তম্ভটি পরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে স্থানান্তরিত স্মৃতি সৌধটি দাগারকুটির সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। পরে শহীদদের স্মরণে নতুন অনন্তপুর বাজারের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ।

হাতিয়ার মানুষ আজও গভীর শ্রদ্ধা ও বেদনায় স্মরণ করে ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল রাতকে। স্বাধীনতার এতো বছর পরও হাতিয়া গণহত্যা দিবস জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও, উলিপুরবাসীর হৃদয়ে এটি অম্লান হয়ে আছে।

হাতিয়া গণহত্যা সম্পর্কে স্থানীয় আব্দুল মালেক চাঁদ (৭০) বলেন, আমি তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে আমাদের নয়াডারা গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামের অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন প্রাণ হারালেও আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। সেই বীভৎস রাত আজও তাড়া করে বেড়ায়।

হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াডারা গ্রামের শিক্ষক বকুল মিয়া বলেন, হাতিয়ার গণহত্যা দেশের উল্লেখযোগ্য নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ঘটনার দিন মুহুর্মুহু গুলির শব্দে দাগারকুটি, গুজিমারি ও নয়া ডারাসহ অনেক এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে সেদিন অনেক মানুষ শহীদ হন। সেদিন আমিও অনেক স্বজন হারিয়েছি। সেই দুঃসহ স্মৃতিগুলো এখনও চোখে ভাসে।

দিবসটির বিষয়ে উলিপুর উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল সাড়ে আটটায় শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। এরপর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মুক্তি পেল ‘ট্রায়াল অব জুলাই ম্যাসাকার’ প্রামাণ্যচিত্র
ঘানায় সেনা নিয়োগের বাছাইয়ে পদদলিত হয়ে নিহত ৬
নভেম্বরের ১১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৩৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান এফবিসিসিআই'র
নওগাঁ জেলা প্রশাসক টেনিস টুর্নামেন্ট শুরু
আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হলেন সুপ্রিম কোর্টের ১৯ আইনজীবী
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদাভাবে করলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ অপচয় হবে: তারেক রহমান 
ইসলামিক সলিডিরাটি গেমসে টেবিল টেনিসে বাংলাদেশের পদক নিশ্চিত
শেরপুরে পাট চাষীদের প্রশিক্ষণ 
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২,৪০০ মামলা
১০