
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়।’
তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ট্র্যাক রেকর্ড আমরা অতীতে দেখেছি। তাদের কাছে কোনো প্ল্যান নেই। কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে রাষ্ট্র চলে না, জনগণের পেটের খাবার কর্মসংস্থান, জনগণের অর্থের সংস্থান হয় না। এসব কিছুর জন্য পরিকল্পনা লাগে। জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে, কীভাবে আমরা দেশকে পরিচালনা করব, তাদের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করব। পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চায়। দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
এ সময় দেশের দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নারী শিক্ষার বিস্তার, ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, তরুণদের প্রশিক্ষণ, শিল্পখাতের প্রসার, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতা-কর্মীদের তা জনগণের দ্বারগৌড়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং অধিকার রক্ষায়(যেমন: তালপট্টির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়)বিএনপির সুস্পষ্ট ও সফল ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে ভারতকে তাড়িয়ে বাংলাদেশেরই অংশ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। পানির ন্যায্য হিসাব পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গিয়েছে একমাত্র বিএনপি। তারও আগে ১৯৭৫ সালে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান শাসনভার গ্রহণ না করলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেত।
বিএনপি দেশকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে বারবার মুক্ত করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির আমলে দুর্নীতির সূচক কমতে থাকে। প্রতিবার বিএনপির সরকার দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে কাজ করেছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে ধীরে ধীরে দেশকে দুর্নীতির ‘তকমা’ থেকে বের করে আনা হয়েছিল। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করেছিলেন। তখন সরকারি কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে অনুমতি লাগত না। অথচ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সেই আইন পাল্টে ফেলে। বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এসব নিয়ম পাল্টে ফেলা হবে।
দেশের নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করার ওপর জোর দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মূল জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদেরকে কেন ঘরের মধ্যে রেখে দেব? বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রায় চার কোটি পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। তাদেরকে স্বাবলম্বী করতে এই উদ্যোগ। যে পারিবারে যাদের প্রধান নারী আছেন, তাদের ফ্যামিলি কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। যারা সমাজে পিছিয়ে দুস্থ কিংবা পিছিয়ে পড়া নারী রয়েছে তারা আগে এই কার্ড পাবেন। তবে প্রায়োরিটি অনুযায়ী সমাজে পিছিয়ে পড়া সমাজের নারীরাই আগে এই কার্ড পাবেন। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী মা হিসেবে নারীরা নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, যে কোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। অন্যায় যে করে সে কোনো দলের হতে পারে না, সে অন্যায়কারী। অতীতে দলের কেউ অন্যায় করলে বিএনপি দলীয়ভাবে নয়, আইন দিয়ে বিচার করেছে। আগামীতেও সেটাই করবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তি বড় নয়, যেহেতু এটা দলীয় কর্মসূচি, তাই সবার আগে দলকে নিয়ে আসতে হবে। দল যদি টিকে থাকে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন যদি এই দলের পক্ষে থাকে তাহলেই আমরা দেশ গড়ার কর্মসূচিগুলো সফল করতে পারবো। তাই দেশের মানুষের সমর্থন পেতে হলে, যার যার এলাকায় টিম করে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো লিফলেট আকারে যে যত কপি পারেন ছাপিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের আজকে প্রতিজ্ঞা, আমাদের আজকের কর্মপন্থা হলো এই পরিকল্পনাগুলোর সাথেই আমরা দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করবো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, সামনে অনেক গুরত্বপূর্ণ কাজ হলো- মানুষের কাছে গিয়ে তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলতে হবে- ভাই, বোন অথবা মা আমরা আপনাদের জানাতে এসেছি; আমার দল বিএনপি অতীতে এই এই কাজ করেছে। দুর্নীতি দমন, দেশে খাদ্য উৎপাদন, মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান তৈরি, ইন্টারনেট সুবিধা বিএনপিই করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করা। কাজেই দেশের কল্যাণে যদি কিছু করতেই হয়, তবে বিএনপিই করতে পারবে। মানুষকে বলতে হবে ভবিষ্যতে যদি আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা থাকে তবে বিএনপি আপনাদের কল্যাণে কাজ করবে।
বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলোর প্রত্যেকটি শব্দ জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। মা বোন, তরুণ প্রজন্ম, ইমাম মুয়াজ্জিন সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের হাতে কোনো যাদু নেই জনগণ সেটা জানে। জনগণ দেখতে চায় বিএনপি করতে চায় কিনা, করবে কিনা। আমরা দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো যদি ৪০ ভাগও বাস্তবায়ন করতে পারি তবে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। জনগণ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। কাজেরই আর বসে থাকার সময় নেই।
তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রত্যেকটি নেতাকর্মী একটা জিনিস মনে রাখবেন- দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সব কিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর। আমার যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। দেশকে আমরা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারবো। যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, এ দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন দেখা দেবে। কাজেই ঘরে বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই। সবাইকে সজাগ হতে হবে। মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এটাই হোক আমাদের দেশ গড়ার শপথ।’
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান আগামী শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।