বাসস
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩০
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্পে শিক্ষা সুবিধা

পঞ্চগড়, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : কয়েক মাস আগেও ভূমিহীন কৃষক শহিদুল (৪৮) চিন্তিত ছিল তার ভাঙ্গা কুটির নিয়ে। তার ৬ সদস্যের পরিবারের খাবার যোগাড়ের পাশাপাশি আরেকটি বড় চিন্তা ছিল তাদের থাকার ঘরটি  বসবাসের উপযোগি রাখা নিয়ে।
পঞ্চগড় শহরের উপকন্ঠে মোহনপাড়া  গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল বাসসকে বলেন, ‘ আমার প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল পরিবারের সদস্যদের আহার যোগাড় করা। এর পাশাপাশি আমাকে তাড়া করে বেড়াত যে বিষয়টি, তা হলো আমাদের কুটির খানি খাড়া রাখা।’
শহিদুলের এখন আর সেই দু:চিন্তা নেই। তার এখন দুটি শোবার ঘর, একটি রান্নার ঘর, একটি টয়লেট  ও একটি বারান্দাসহ একটি আধাপাকা ঘরের মালিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’র আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এই ঘরের মালিক সে। তার নিজের  জন্য এবং তার তিন সন্তানের জন্য এখানে আরো রয়েছে  শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা।
শহিদুল বলেন,  আমার জীবনের  প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলাম অবহেলিত এবং প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহের পাশাপাশি আমার মূল চিন্তা ছিল একটি নিরাপদ আবাসনের। তবে এখন আবাসনের সেই চিন্তা আর নেই।’
তিনি আরো জানান, তিনি বর্তমানে তার পরিবারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের পাশাপাশি  শিক্ষা ও চিকিৎসার  ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায়  বয়স্কদের পাশাপাশি স্কুল থেকে ঝড়েপড়া শিশুদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে। এই দায়িত্ব দেওয়া  হবে স্থানীয় এনজিওকে। তিনটি শিফটে চালানো হবে এই শিক্ষা কার্যক্রম।
শহিদুল জানান, ‘ আমার মতো বয়স্ক পুরুষ স্কুলে (কেন্দ্রে) যাবে সন্ধ্যার  শিফটে, বয়স্ক নারীরা যাবেন বিকালের শিফটে এবং স্কুল থেকে ঝড়েপড়া শিশুরা  যাবে সকালের শিফটে।


বাসস’র সংবাদদাতা দেখতে পান যে, বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৫০ জন নারী শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা গ্রহন করছেন।  ৩ জন নারী শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যারা নিজেরাই কলেজের শিক্ষার্থী এবং আশ্রয়ণ আবাসের বাসিন্দা। তারা অবসর সময়ে স্বেচ্ছাসেবী সেবা প্রদান করছে।
কেন্দ্রের শিক্ষক আলপনা আক্তার, যাঁর পিতা  নাজিমুল ইসলাম (৬৫) প্রকল্পের একজন সুবিধাভোগী, তিনি বলেন, ‘আমরা যা শিখেছি তা ছড়িয়ে দিতে চাই। . . তারা (শিক্ষার্থীরা) আমাদের ছোট ভাই-বোন।’
তিনি বলেন, কেন্দ্রটি কিশোরী মেয়েদের বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড এবং সেলাই মেশিন দিয়েছে।
শহিদুল বলেন, বিশাল আশ্রয়ণ কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত খালি জমি ছিল, যেখানে তিনি এবং তার প্রতিবেশীরা তাদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য শাকসবজি চাষ করছেন এবং বেশ কয়েকজন খোলা জায়গায় গবাদি পশু পালন করছেন।


পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম জানান, জেলার ১৭৬টি আশ্রয়ণ কমপ্লেক্সের মধ্যে মোহনপাড়া একটি । ফলে দেশের  উত্তর-পশ্চিমের এই প্রশাসনিক জেলায় কেউ আর গৃহহীন নেই।
তিনি আরও বলেন, জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য এবং তাদের দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য এ পর্যন্ত ৬টি কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছে। ‘আমরা ইতিমধ্যে আশ্রয়ণ সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন আয়ের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি পেশাভিত্তিক ডাটাবেস তৈরি করেছি।
ডিসি জহুরুল বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার সকল শিশুর অর্থাৎ ২ হাজার ৫০ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা বিভাগ একটি ক্লাস্টার ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।’ তিনি এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপ-পরিচালক এবং  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্য একটি শাখার পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন  করেন।
সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা বলেন, শিশুদের শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য তাদের সাইকেল, স্কুল ব্যাগ এবং ব্যাডমিন্টন প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি সেন্টারের মাধ্যমে স্কুল ঝরে পড়া শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মৌলিক সাক্ষরতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম  পরিচালনা করা হচ্ছে।
ভূমিহীন মানুষ, যারা কষ্টের মধ্যে অন্যের জমিতে ঝুপড়িতে থাকতেন, তারা এখন সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে স্থায়ী আবাস পাওয়ার পরে শিক্ষা, বিদ্যুৎ নিরাপদ পানীয় জল এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধা ভোগ করছেন।
জহুরুল বলেন, ৬৪৭ জন পুরুষ ও ৬৯৭ জন নারীসহ ১ হাজার ৩৪৪ জন উপকারভোগীকে বিভিন্ন বাণিজ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় সেলাই মেশিন, অটো ভ্যান ও গৃহপালিত পশু দেওয়ার মাধ্যমে আশ্রয়ণ সুবিধাভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।