চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিতে ব্যস্ততা বেড়েছে মাছ ধরার বিত্তি তৈরির কারিগরদের

বাসস
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৩৫
মাছ ধরার বিত্তি। ছবি: বাসস

বিপুল আশরাফ

চুয়াডাঙ্গা, ১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস):গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জেলায়  বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আষাঢ় মাসের শুরু হওয়ার আগে থেকে প্রতিদিন কখনো হালকা, মাঝারি আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে জেলার ৪ উপজেলার বিল, বাওড়, পুকুর, ডোবা ও জলাশয়। বৃষ্টির নতুন পানিতে উঠে আসছে দেশি প্রজাতির মাছ। দেশীয় ছোট মাছ ধরতে সেই কারণে চাহিদা বেড়েছে বিত্তির। এই ছোট মাছ ধরার উপকরণ বিত্তি বা ঘূর্ণি তৈরির কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামবাসীর।

সরজমিনে শৈলমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির নারী ও পুরুষেরা বিত্তি তৈরির কাজে এখন অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে। এই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার বিত্তি তৈরির কাজ করেন। বিত্তি তৈরির কাজ করে পরিবারগুলো আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত বেশি তাই বিত্তির চাহিদা বেশি। সবাই পাল্লা দিয়ে বিত্তি বুননের কাজ করে যাচ্ছে। মাছ ধরার বিত্তি তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, তাল গাছের ডগার সুতা ও নাইলনের সুতা। 

তাল গাছের ডগাগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখে পচিয়ে নিতে হয়। তারপর আঁশ থেকে সুতা হয়। বাঁশ সাইজ মত কেটে তা দিয়ে  কাঠি তৈরি করতে হয়। বাঁশের কাঠি, তালের সুতা ও নাইলনের সুতা দিয়ে গ্রামের নারী-পুরুষ নিপুণ হাতে বিত্তি তৈরি করেন। এবার বর্ষায় খাল-বিল, নদী, ডোবা, পুকুর, মাঠ পানিতে থইথই করছে। 

এ সময় জেলে ও স্থানীয়রা বিত্তি পেতে কাটরা, পুঁটি, চিংড়ি, টাকি, ঝাঁয়া, বাইনসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেছে। বিশেষ করে ছোট মাছ ধরায় এর তুলনা হয় না।

 প্রতিটি বিত্তি প্রকারভেদে বাজারে বিক্রি হয় ৩০০-৬০০ টাকা দরে। বাজারে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। কারণ এখানকার তৈরি বিত্তির মান ভাল।

বিত্তি তৈরির কারিগর মন্টু মিয়া বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত বেশি। যার কারণে বিত্তির চাহিদাও বেশি। এখন অনেক ব্যস্ত সময় পার করছি। আমরা খুচরা ও পাইকারি দামে বিত্তি বিক্রি করে থাকি। 

তিনি আরও বলেন, একটি মাঝারি সাইজের বাঁশ ২০০ টাকা থেকে আড়াইশো টাকায় কিনতে হয়। তাল গাছের ডগা ৩০ টাকায় কিনতে হয়। এর সাথে লাগে লাইলন সুতা।

এসব দিয়ে তৈরি হয় বৃত্তি। একটি বাঁশ দিয়ে ৩/৪টি  বিত্তি তৈরি করা যায়।  এ কাজে অনেক বেশি পরিশ্রম। আমাদের গ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বিত্তি বিক্রি হয়।

জেলার শিয়ালমারি হাটে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন ব্যাপারীরা মাছ ধরার বিত্তি নিয়ে এসেছে। 

অনেকে কেনার জন্য দরদাম করছে।

বিত্তি তৈরির কারিগর মর্জিনা খাতুন বলেন, বিয়ের পর আমার শাশুড়ির কাছ থেকে আমি এই কাজ শিখি। পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও বিত্তি তৈরির কাজ করি। এতে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আসে। সপ্তাহে ৩-৪টি বিত্তি তৈরি করতে পারি। এবার বিত্তির চাহিদা বেশি। বিত্তি তৈরি করতে গিয়ে রান্নার সময় পাচ্ছি না। আরেক বিত্তি তৈরির কারিগর তানভীর রহমান বলেন, গত বছরের এই সময় বিত্তি কেনার খরিদ্দার ছিল না। কিন্তু এই বছরে বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে বিত্তির অনেক চাহিদা বেড়ে গেছে।

বিত্তির অর্ডার পেয়ে আমরা এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কাজই করে যাচ্ছি।

 গ্রামবাসীরা বলেন, শুধু বর্ষাকালে এই কাজ বেশি হয়। বছরের বাকি সময় আমাদের বসে থাকতে হয়। 

এবার বৃষ্টিপাত বেশি তাই আমাদের কাজকর্ম বেশি। কিন্তু প্রতিবছরই এমন বর্ষা হয় না। সরকারি অথবা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমাদেরকে বিত্তি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি, করাত, সুতালি ইত্যাদি বিতরণ করলে আমাদের একটু সুবিধা হয়। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তার দাবি করেন তারা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার অনেক বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে খাল, বিল ও ডোবায়  মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট মাছ ধরতে প্রয়োজন হয় বিত্তির। স্থানীয়ভাবে এটা তৈরি হচ্ছে।  জেলায় বর্তমানে বিত্তির চাহিদা বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে বৃত্তি তৈরির কারিগরদের চাহিদা বেড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে এ শিল্পটা জড়িত।  তিনি আরো বলেন, উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করলে বিত্তি তৈরির যে সব উপকরণ লাগে সেটা সরবরাহ করার চেষ্টা করা হবে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত বছর জুলাই মাসে জেলায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বছর জুলাই মাসে ৪১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে
মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প 
বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫৬ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি প্রদান
সৌদি আরবে অপহরণ, দেশে মুক্তিপণ আদায় চক্রের সদস্য গ্রেফতার
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১১
সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া
১০