
ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বহিষ্কৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস. এম. জাহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার এবং নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদক জানায়, অভিযুক্ত এস. এম. জাহিদুল ইসলাম ২০১৩ সাল থেকে সমিতির আর্থিক নথি ও অ্যাকাউন্ট পরিচালনার দায়িত্বে থেকে গোপনে ‘প্রকল্প পরিচালক’ নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি সদস্যদের কিস্তি বাবদ প্রদত্ত পে-অর্ডারের অর্থ অনুমোদিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ওই গোপন অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন এবং সেখান থেকে প্রায় দুই কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুলাই মাসে ভ্যাট, কর ও রেজিস্ট্রেশন খাতে প্রদত্ত প্রায় ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার কোনো হিসাব না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
২০০৭ সালে গঠিত বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির আওতাধীন গ্রিন ভ্যালি (খিলক্ষেত) আবাসন প্রকল্পে সরকারের প্রায় দেড়শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্পটিতে বিদ্যালয়, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।
দুদক জানায়, অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম প্রথমে অফিস সহায়ক পদে যোগদান করলেও পরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন। অফিসের আর্থিক নথি, চেক বহি, পে-অর্ডারসহ সবকিছু তার জিম্মায় ছিল। ওই সুযোগে তিনি ‘প্রকল্প পরিচালক, বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে ২০১৩ সালের ৯ মে সোনালী ব্যাংক, তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। এই অ্যাকাউন্টের বিষয়টি সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নিকট গোপন রাখা হয় এবং সেখানে সদস্যদের জমাকৃত কিস্তির টাকা জমা করে আত্মসাৎ করা হয়।
অভিযুক্তের মাসিক বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- কুড়িগ্রামে প্রায় এক একর জমি, ঢাকার বড়কাঁঠালদিয়ায় ২ কোটি টাকার জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি এবং সিঙ্গাপুরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ।
এদিকে, ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সমিতির অফিসে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই কর্মচারীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আত্মসাৎ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
দুদক বিষয়টিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুবকর সিদ্দিক। তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন কমিশনের পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১)।