বাসস
  ১৩ জুন ২০২৩, ২৩:২৯

দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস দল

ঢাকা, ১৩ জুন ২০২৩ (বাসস) : এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতায় (জুনিয়র অনুর্ধ্ব-১৭) অংশগ্রহন শেষে সিঙ্গাপুর থেকে আজ দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জুনিয়র জিমন্যাস্টিকস দল। সন্ধ্যায়  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ দলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ। এ সময় ফেডারেশনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও  উপস্থিত ছিলেন।
কোন পদক না পেলেও এবারের প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করেছে বাংলাদেশের  জুনিয়র  জিমন্যাস্টরা। চীন, জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ার মতো বিশ্বমানের জিমন্যাস্টদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ দারুন সফলতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে উঠে আসা রাফিল আহমেদ যে চমক দেখিয়েছেন তা ছিল অভাবনীয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাংলাদেশের  রাফিল  আহমেদ। টাইব্রেকিং নিয়মে ভল্টিং টেবিল  ইভেন্টে  তৃতীয় স্থান দখল করতে না পেরে পদক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রাফিল। প্রতিযোগিতায় ভল্টিং টেবিল ইভেন্টের ফাইনালে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ১৭ বছর বয়সী এই জিমন্যাস্টকে।
১৬টি দেশের ৪২ জন প্রতিযোগির  মধ্যে  ভল্টিং  টেবিল ইভেন্টের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডের ফাইনালে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ আটে স্থান পান রাফিল। চুড়ান্ত ওই লড়াইয়ে কাজাকিস্তানের জিমন্যাস্টের সঙ্গে যৌথ ভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিশ্চিত করেন তিনি। কিন্তু টাইব্রেকিংয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান লাভ করে কাজাকিস্তান।
পদক না পেলেও  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে  নিজের পারফরমেন্সে সন্তুস্ট ও আনন্দিত রাফিল বিমান বন্দরে বাসস’কে বলেন,‘আরেকটু ভালো করতে পারলে আমি খুশি হতাম। বর্তমান অবস্থায় আমি আংশিক খুশি। পুরোপুরি না। আমি আমার সামর্থ্যের সেরাটাই দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত:  প্রত্যাশিত ফল পাইনি। আমার ল্যান্ডিংয়ে দুই স্টেপ বেশী হয়ে গিয়েছিল বিধায় সমান পয়েন্ট পেয়েও টাইব্রেকে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে।’
তিন বছর আগে বাবা মারা গেছে রাফিলের। পিতৃহীন এই জিমন্যাস্ট ও তার পরিবারকে  আগলে রেখেছেন তার নানি। ভালো ফলাফলের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিবার ও দশেবাসীর  হাসি ফুটাতে চান তিনি। ময়মনসিংহের ছেলে রাফিল বলেন,‘ এবারের পারফরমেন্সের পর  আমি আত্মবিশ্বাসী। আশা করি আগামীতে সফল হবো।  সিনিয়র পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো কঠিন হবে। তবে আমার মনে হয় এতে কোন সমস্যা হবে না। আরেকটু মনোযোগী হতে হবে এবং পরিশ্রম আরো একটু বাড়াতে হবে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যে ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে সেটি অব্যাহত থাকলে আশা করি আরো ভালো করতে পারব। ’
এদিকে জিমন্যাস্ট দলের এমন সফলতায় সন্তুস্ট  প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ। দলকে ফুল দিয়ে বরণ করার পর তিনি বাসস’কে বলেন,‘ আমি খুবই সন্তুষ্ট, কারণ এরকম একটি বড় মঞ্চে আমাদের ছেলেরা কখনো পারফর্ম করেনি। যে পরিবেশ থেকে তারা গেছে এবং সেখানে পারফর্ম করেছে তা দৃঢ় মানষিকতার জিমন্যাস্টদের জন্যও কঠিন ব্যাপার। প্রতিদ্বন্দ্বি চীন, জাপান বা কোরিয়ানরা যে প্লাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে আমাদের পরিবেশের তারতম্য আকাশ পাতাল। এজন্য মহান সৃস্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই আমাদের কোচকে। কারণ তিনিই ছেলেদের মানষিকতাকে একজায়াগায় পুঞ্জিভুত করে রাখতে পেরেছিলেন।’
অবশ্য যেভাবে দলটি অনুশীলন করেছে তাতে প্রত্যাশা আরো বেশী ছিল  উল্লেখ করে  বশির  আহমেদ  বলেন,‘ আমাদের প্রত্যাশা আরো বেশী ছিল, রাফিল যে জায়াগায় ল্যান্ডিং করলে স্বর্নপদক পেতেন সেটি করতে না পারায় আমাদের চতুর্থ হতে হয়েছে। তারপরও আমরা সন্তুস্ট। আরেকটি বছর যদি আমরা এভাবে  নিবিড় অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারি তাহলে হয়তো অভ্যর্থনা আরো জমকালো হবে।’
তিনি বলেন,‘ আমাদের আরো কিছু সমস্যা আছে। আমরা যদি আরো অন্তত এক সপ্তাহ আগে দলকে সেখানে পাঠাতে পারতাম  তবে ছেলেরা  পরিবেশের সঙ্গে আরো বেশি মানিয়ে নিতো পারতো। কিন্তু আর্থিক সী মাবদ্ধতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তখন হয়তো দলগত ভাবে আমরা আরো ভালো করতে পারতাম। আমাদের পরিকল্পনায়ও কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল, কারণ এর আগে এত বড় ইভেন্টে আমরা অংশগ্রহন করিনি। সুতরাং এখান থেকে আমরাও অনেক কিছু শিখেছি, আশা করি আগামীতে আমরা আরো ভালো করতে পারব। এই ছেলেদের নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। ’
দলের হয়ে সেরা পারফরমেন্স  করা  রাফিলের জন্য একটি বড় পুরস্কার অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে বশির আহমেদ বলেন,‘সফরকারী দলের প্রত্যেক সদস্যের জন্যই পুরস্কার রয়েছে।  একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যেমে  জিমন্যাস্টদের  এ পুরস্কার দেয়া হবে। সারপ্রাইজ হিসেবে আমেরিকায় জন্মগ্রহনকারী বাংলাদেশী  বংশোদ্ভুত  কৃতি জিমন্যাস্ট ও কোচ শাইখ সিজার অনুষ্ঠানে  উপস্থিত থাকবেন।  আগামী দুই বা তিন জুলাই  বড় একটি অনুষ্টান আয়োজনের মাধ্যমে আমরা জিমন্যাস্টদের পুরস্কৃত করতে পারব বলে আশা করছি। সিজার এখন ফ্রান্সে আছেন। সেখানে মার্কিন পুরুষ জিমন্যাস্টদের কোচিং করাচ্ছেন। তিনি পুরো পরিবার নিয়ে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনেরও আশ্বাস দিয়েছেন।’
 এক প্রশ্নের জবাবে বশির আহমেদ বলেন,‘ টানা প্রায় আট মাসের মতো ছেলেরা ক্যাম্পে ছিল। ছেলেদের অনুশীলন অব্যাহত থাকবে। কারণ পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ রয়েছে। অচিরেই এই ছেলেরা সিনিয়র লেভেলে চলে যাবে। তাই আমরা সিনিয়র প্রতিযোগিতার দিকেই মনোযোগ দিব। আগামী এক বছর এই অনুশীলন চলবে। এখন আমাদের পুর্ন মনোযোগ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে। এছাড়া আছে এসএ গেমস।’
উল্লেখ্য, আগামী বছর জুন- জুলাইয়ের দিকে বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপ।