গ্রামের ধীরগতির মহিষের গাড়ি আজ কেবলই স্মৃতি

বাসস
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০৬ আপডেট: : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১১
উত্তরাঞ্চলের মেঠোপথে প্রধান পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো গরুর গাড়ি, ছবিটি সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলায় তোলা। ছবি : বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটের গ্রামীণ জীবনের এক সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল গরু বা মহিষের গাড়ি।

ধান-পাট বহন, মালামাল পরিবহন কিংবা মানুষের যাতায়াতের সবক্ষেত্রেই এটি ছিল গ্রামের অপরিহার্য বাহন। জনপ্রিয় গান ‌‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে...’ আজও সেই সময়ের স্মৃতিকে জাগ্রত করে।

এক সময় উত্তরাঞ্চলের মেঠোপথে প্রধান পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো গরুর গাড়ি। বিয়ের শোভাযাত্রা থেকে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া সবক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল অপরিসীম। তবে যান্ত্রিক যুগের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ধীরগতির, পরিবেশবান্ধব বাহনটি এখন প্রায় বিলুপ্ত।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় প্রথম চাকাওয়ালা গাড়ির ব্যবহার শুরু হয়। পরে সিন্ধু সভ্যতা ও ভারতীয় উপমহাদেশেও গরুর গাড়ি পরিবহনের অন্যতম বাহন হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আশি বছরের প্রবীণ রমজান আলী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘দুই যুগ আগে গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। বরযাত্রা, মাল পরিবহনসহ সবকিছুতেই গরুর গাড়ি ছিল অপরিহার্য। গ্রামের যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের কদরও ছিল বেশি। এখনো আমাদের গ্রামের অনেক এলাকায় মাঝে মধ্যে গরুর গাড়ি চোখে পড়ে, যা স্মৃতি হিসেবে মনের গভীরে নাড়া দেয়।’

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক আজগার আলী জানান, ‘এখনও মাঝে মাঝে কৃষিকাজে গরুর গাড়ির ব্যবহার হয়। গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গরুর গাড়ি নিয়ে ভাওয়াইয়া গানও। 

‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘আস্তে বোলাও গাড়ি...’এসব লোকগীতি আজও মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়।’

তবে আধুনিক মোটরযানের কারণে গরুর গাড়ির ব্যবহার এখন নেই বললেই চলে। লালমনিরহাটের স্কুল শিক্ষক মাসুদ রানা বিপ্লব বলেন, ‘কৃষিনির্ভর জনপদে একসময় গরুর গাড়িই ছিল মানুষের প্রধান ভরসা। এখন যন্ত্রচালিত যানবাহনের কারণে এটি শুধু ইতিহাস হয়ে আছে।’

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক আবু সালাম ও ইব্রাহিম হক জানান, ধান কাটা থেকে বিয়ের শোভাযাত্রায় গরুর গাড়ি ব্যবহার হতো। এটি সম্পূর্ণ জ্বালানিমুক্ত, দূষণহীন ও দুর্ঘটনাহীন পরিবহন।

প্রবীণ সাংবাদিকদের মতে, ‘এখন গ্রামের অনেক শিশু জানেই না গরুর গাড়ি দেখতে কেমন। লোকজ মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রদর্শন হলেও তা কেবল ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র।’

রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সংস্কৃতি গবেষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “গরুর গাড়ি শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, এটি বাঙ্গালির সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়ি ঐতিহ্য। 

প্রযুক্তির বিকাশে এর ব্যবহার কমলেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা জরুরি। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হলেও গরুর গাড়ির স্বর্ণালী দিনগুলো আজও স্মৃতির পাতায় জীবন্ত।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
অধ্যাপক ড. এম. শমশের আলীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
প্রতি কেজি আলুর সর্বনিম্ন মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ
ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পদোন্নতি জটিলতা : সমাধান চায় ডিকেআইবি
ডেঙ্গুতে আজ ৪৩০ জন আক্রান্ত
সমুদ্র বন্দরসমূহে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছেন: রিজভী
আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চান ৬০ জন
আফগানিস্তানে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ২৫
পল্লী এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর: পিরোজপুর জেলা প্রশাসক
১০