বাসস
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৫
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬

বিশ্ব বাণিজ্যের পূর্ণ সুবিধা পেতে ডিজিটাল বিভাজন ঘোচাতে হবে : ডব্লিউটিও

জেনেভা, সুইজারল্যান্ড, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বৈশ্বিক বাণিজ্য সুবিধার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও প্রতিপালনের সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যকার ডিজিটাল বিভাজন ঘোচানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৪’-এ সংস্থাটি এ আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বাণিজ্য ও অন্তর্ভুক্তি : বাণিজ্যকে কীভাবে সবার জন্য কার্যকর করা যায়।’
বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, বেকার ভাতা, আরো দক্ষ ও ভ্রাম্যমান কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ, মূল্য স্বল্পতা থেকে গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতার নীতি, নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো ও কার্যকর আর্থিক বাজারের মতো সহায়ক দেশীয় নীতির মাধ্যমে বাণিজ্যকে আরো অন্তর্ভূক্তিমূলক করতে একটি সমন্বিত কৌশলের ওপরও প্রতিবেদনটিতে জোর দেয়া হয়েছে।
ডব্লিউটিও-র বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিবেদনের ২০২৪ সংস্করণ শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যে, ৩০ বছর আগে ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশগুলোর মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতারও প্রয়োজন। 
এতে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও ভাল সমন্বয় বাণিজ্য নীতি ও পরিপূরক নীতিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে সাহায্য করতে পারে এবং এগুলোর অভ্যন্তরে ও বাইরে তাদের প্রভাব জোরালো করতে পারে। ডব্লিউটিও’র মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা বলেন, ‘সম্ভবত প্রতিবেদন থেকে সবচেয়ে বড় গ্রহণযোগ্যতা হল, দারিদ্র্য হ্রাস ও অভিন্ন সমৃদ্ধি গড়ে তুলতে বাণিজ্যের রূপান্তরমূলক ভূমিকার পুনর্নিশ্চিতকরণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় বিষয় হল যে আমরা বাণিজ্য করতে আরও অনেক কিছু করতে পারি এবং ডব্লিউটিও ওই রাষ্ট্রগুলো ও গত ৩০ বছরের বিশ্বায়নের সময় পিছিয়ে থাকা লোকদের জন্য আরও ভাল কাজ করতে পারে।’
কীভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলতে অবদান রেখেছে তা তুলে ধরে ডব্লিউটিও প্রতিবেদনটি বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য হ্রাস পাওয়ার মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র স্থাপনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে আরো বলা হয়, ১৯৯৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জিডিপিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্যের ব্যাপক অবদান, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর দ্রুত প্রবৃদ্ধি সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটা উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মাথাপিছু জিডিপি’র সমান হয়ে যায়। 
অধিকন্তু, ডব্লিউটিওতে সদস্যপদ ও এর পূর্ব শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (ডব্লিউটিও) স্বাক্ষরকারী সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্য গড়ে ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 
বিশ্লেষণে আরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ১৯৯৫ এবং ২০২০ এর মধ্যে বাণিজ্য ব্যয় হ্রাসের ফলে উচ্চ আয়ের অর্থনীতির সাথে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের অর্থনীতির ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ দ্রুত আয়ের অভিন্নতা ঘটেছে।
সাধারণ বিশ্বাসের বিপরীতে, প্রতিবেদনে ২০২১ জিনি বৈষম্য সূচক এবং ১৫৭টি অর্থনীতির বাণিজ্য উন্মুক্ততা সূচকের তুলনার ভিত্তিতে বাণিজ্য উন্মুক্ততা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ আয় বৈষম্যের মধ্যে দুর্বল সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরা হয়েছে, উল্লেখ করা হয়েছে যে দুর্বল বাণিজ্য অংশগ্রহণ এবং উচ্চ পণ্য নির্ভরতাসহ অনেক অর্থনীতি পিছিয়ে রয়েছে।
১৯৯৬ এবং ২০২১-এর মধ্যে, নিম্ন এবং মধ্য-আয়ের অর্থনীতি যেগুলি মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে গড় উচ্চ-আয়ের অর্থনীতির তুলনায় ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশ্ব জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রধানত আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ছিল, এটা যোগ করা হয়েছে।
এটি উল্লেখ করেছে যে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশলোর মধ্যে যারা পিছিয়ে রয়েছে, তারা সাধারণত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কম সম্পৃক্ত, বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ কম পায়, দেশীয় পণ্যের উপর বেশি নির্ভর করে, কম জটিল পণ্য রপ্তানি করে ও কম অংশীদারদের সাথে বাণিজ্য করে।
ডব্লিউটিওর প্রধান অর্থনীতিবিদ রালফ ওসা বলেছেন, ‘কম বাণিজ্য না অন্তর্ভুক্তির প্রচার করবে, না একা বাণিজ্য করবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘বাস্তব অন্তর্ভুক্তি একটি ব্যাপক কৌশলের দাবি করে- যেটি সহায়ক দেশীয় নীতি ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সাথে উন্মুক্ত বাণিজ্যকে একীভূত করে।