শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও কর্পোরেট খামারিদের সহযোগিতায় রাজধানীতে ডিমের মূল্য অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
টিসিবি’র দৈনিক মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা থেকে নেমে এখন ৪৮ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অনেক এলাকাতে এখনও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম, যা নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) কার্যালয়ে রাজধানীর দুই পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রয়ের চলমান কার্যক্রম বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
কাপ্তান বাজার ও তেজগাঁও পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহ কার্যক্রমের মূল সমন্বয়কারি বিপিআইসিসি বলছে- কিছু বড় খামারির অসহযোগিতা, ছোট ও মাঝারি খামার থেকে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের বেশি দামে ডিম ক্রয়, স্থানীয় পর্যায়ে হঠাৎ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা একটি গোষ্ঠীর ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ডিম হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা ইত্যাদি কারণে খামার থেকে সরাসরি পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কাপ্তান বাজার ও তেজগাঁও পাইকারী বাজারের আড়তদারেরা বলছেন- রাজধানীর এই দুই বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রি হলেও অন্যান্য বাজারগুলোতে ডিমের মূল্য বেশি। তেজগাঁও বাজারে মূলত ছোট ও মাঝারি খামার থেকেই ডিমের চালান আসতো। কিন্তু জেলা শহরগুলোতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি হওয়ায় ছোট ও মাঝারি খামারগুলো এখন তাদের কাছে ডিমের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।
কাপ্তান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোস্তাফিজ ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারি হাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেশ কয়েকটি বড় খামার থেকে তারা এখন পর্যন্ত একটি ডিমও পাননি। এর মধ্যে রয়েছে- আফিল এগ্রো, প্রাণ এগ্রো, কৃষিবিদ পোল্ট্রি, আমান পোল্ট্রি, আরমিন্তা পোল্ট্রি ও দিলরুবা পোল্ট্রি। অন্যদিকে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি’র সভাপতি মো. আমানত উল্লাহ বলেন, ছোট ও মাঝারি খামার থেকে ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে শুধুমাত্র করপোরেট খামারের ডিম দিয়ে ঢাকার প্রায় ২ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ঢাকার পাশ^বর্তী জেলা- টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়নগঞ্জ থেকে ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক করতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ের মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, অধিকাংশ করপোরেট খামারগুলো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে অবস্থিত। স্থানীয় জেলা প্রশাসন চাইছে, আগে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে হবে, পরে অন্য জেলায় ডিম পাঠানো যাবে। তিনি বলেন, গত ২৩ অক্টোবর জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকগণকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ডিমের স্থানীয় উৎপাদক ও প্রান্তিক খামারিদের সম্পৃক্ত করে মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য অনুরোধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারির পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, জেলা শহরগুলোতে সরকার নির্ধারিত দর ঠিক থাকলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা অনৈতিক সুবিধা নিতে পারবেন না।
কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় প্রচুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে কমেছে ডিমের উৎপাদন। ২০২৩ সালে বন্যার পরও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যে কোন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সরবরাহ কমলে, দাম বৃদ্ধি পায়- এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আক্রান্ত জেলার খামারিরা পুনরায় বাচ্চা তোলা শুরু করেছেন।
আগামী এক মাসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তবে ডিমের উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।
ডায়মন্ড এগ লিঃ এর প্রধান নির্বাহী মো. আসাদুজ্জামান মেজবাহ বলেন, আগামীকাল চলমান কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভোক্তার স্বার্থে এ মেয়াদ আরও ২ সপ্তাহ বর্ধিত করা প্রয়োজন। সভায় উপস্থিত সকলেই এ মতামতকে সমর্থন করেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ বলেন, ডিম-মুরগির প্রকৃত উৎপাদন কত সে বিষয়ে তথ্যগত বিভ্রাট রয়েছে। সরকারি উপাত্তের সাথে বেসরকারি উপাত্তের বড় ফারাক আছে, ফলে সরকার, মিডিয়া ও ভোক্তা সকলেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর কাপ্তান বাজার ও ১৮ অক্টোবর তেজগাঁও পাইকারী বাজারে সরকারি দরে ডিম বিক্রির ২-সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লিঃ, প্যারাগন পোল্ট্রি, পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি, নারিশ পোল্ট্রি, ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি, নর্থ এগ লিঃ, নাবিল এগ্রো, আর.আর.পি, রানা পোল্ট্রি, মেগা পোল্ট্রি ও চিত্রা এগ্রো।