ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেছেন, ব্রান্ডিং ও মার্কেটিং আমাদের সিএমএসএমইদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে চ্যালেঞ্জিংও। তবে নিজেদের বৈশ্বিক ব্রান্ড না থাকায় রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা সহায়তা প্রাপ্তিতে আস্থার অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কর্মকৌশল নির্ধারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
আজ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমই খাতের ব্র্যান্ডিং ও বিপণন চ্যালেঞ্জ: রপ্তানির সম্ভাবনা’ বিষয়ক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প সচিব বলেন, ২০১৯ সালের প্রণীত এসএমই নীতিমালা ঢেলে সাজানো হচ্ছে এবং সেখানে নতুন নতুন ব্যবসায়িক খাতগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে উদ্যোক্তাদের বসবাসের ঠিকানাকে ব্যবসায়িক ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে যেতে পারে। এছাড়াও এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারি সকল সংস্থার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, জিডিপিতে আমাদের এসএমইদের অবদান ২৮ শতাংশ হলেও, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়া, সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলি, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার কারণে বিশেষ করে তৈরি পোশাকের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে খরচ বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জরুরি ভিত্তিতে ব্যয় হ্রাসে উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বাড়ানোর উপর নজর দিতে হবে।
এসএমইদের উন্নয়নে পণ্যের সনদ ও কমপ্লায়েন্স সহযোগিতা প্রদান, টেকসই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদান, পণ্যের মান উন্নয়ন ও ব্র্যান্ডিং, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সরকারি সহায়তা ও ক্লাস্টার উন্নয়ন, সমন্বিত নীতি সহায়তা, সিএমএসএমই ডাটাবেইজ তৈরি, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতের সম্প্রসারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তা উন্নয়নে সার্বিক সহায়তার আহ্বান জানান তাসকীন আহমেদ।
বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিসিক উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প পার্ক স্থাপন, স্বল্প হারে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে এবং বিসিক শিল্প পার্কে শিল্প স্থাপনে হোল্ডিং ট্যাক্স অব্যাহিত দেওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি পণ্যের অর্ন্তভুক্তি আরো বাড়নো জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের পণ্যের প্যাকেজিং তেমন আকর্ষণীয় নয়, যেখানে উদ্যোক্তাদের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, বৈশ্বিক বাজারে পণ্য প্রসারের জন্য দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং তৈরির পাশাপাশি দেশের জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। সেই সাথে সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ইপিবিতে শীঘ্রই রপ্তানি ইকো-সিস্টেম এবং সিএমএসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে যেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এতে উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিশ্চিত হবে।
ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান সহ সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।