২০২৬ সালে বাংলাদেশে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অর্থায়ন করতে পারে এডিবি

বাসস
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২:০৭ আপডেট: : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:২৭

ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করতে পারে।

ম্যানিলা-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অর্থায়নকারী এ প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ২০২৬ সালের জন্য তাদের কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন (সিপিএম) এ অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এছাড়াও, যেকোনো জরুরি অবস্থা বা অগ্রাধিকার প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত তহবিল হিসেবে ‘স্ট্যান্ডবাই ফান্ড’ রাখা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, এডিবি সিপিএম গত সপ্তাহে তাদের মিশন সম্পন্ন করেছে। তারা ইআরডির সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেছিল। তারা ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে অন্তত প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তহবিল প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

এডিবির সিপিএম একটি বার্ষিক প্রতিবেদন, যা বাংলাদেশে এক বা একাধিক বছরের জন্য পরিকল্পিত ঋণ এবং অনুদানগুলোর বিস্তারিত উপস্থাপন করে। যেমন- ২০২৩-২০২৫ সালের ঋণ পাইপলাইন।

ম্যানিলা-ভিত্তিক ঋণদাতা এ প্রতিষ্ঠান পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। খাতগুলো হলো- জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন, জ্বালানি দক্ষতা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), সামাজিক সুরক্ষা এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার । 

ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, দেশের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে এডিবি চলমান প্রকল্পে আঞ্চলিক সংযোগ এবং করিডোর উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামো, জ্বালানি, পানি সম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি জানান, এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভবিষ্যতের কার্যক্রমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, আঞ্চলিক সংযোগ, স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নদী পুনরুদ্ধারের ওপরও জোর দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনা করে এডিবি দেশের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও সহায়তা প্রদান করবে, যাতে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করা যায়।

ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, সিপিএম ছাড়াও সম্প্রতি একটি ত্রিপক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভা (টিপিআরএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে এডিবি-অর্থায়নে চলমান ১৫টি প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

টিপিআরএম-এ জানানো হয়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় সময়সীমা কমেছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আরও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রকল্প প্রস্তুতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। যে-সব ক্ষেত্রগুলোতে বেশি সময় লাগে, সেগুলো চিহ্নিত করছি এবং এর ফলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে এবং প্রকল্প পরিচালনা কমিটি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোকেও আরও সুবিন্যস্ত করা হচ্ছে।

ইআরডি কর্মকর্তা জানান, সরকারের অনুরোধে এডিবি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া করিডোর নিয়ে একটি গবেষণা করছে, যাতে এই করিডোরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন বিবেচনা করে বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা যায়।

তিনি বলেন, ঋণদানকারী সংস্থাটি সরকারকে টাকা মূল্যের বন্ড চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত জানতে চাচ্ছি।

চলতি বছর সরকার এ পর্যন্ত এডিবির সঙ্গে ১.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৮টি প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে এসেছে।

ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে, তাই এডিবি বাংলাদেশের জন্য ট্রানজিশন সহায়তার ওপর জোর দিচ্ছে।

এডিবির তহবিল আঞ্চলিক সংযোগ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে সুবিধা দেবে।

২০২৬ সালের ১০টি প্রকল্পের প্রস্তাবিত তহবিল পরিকল্পনা অনুসারে, দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা(সাসেক) এর উদ্যোগের আওতায় চলমান ঢাকা-সিলেট ৪-লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য এডিবি ৩০ কোটি ডলার, নারায়ণগঞ্জ সবুজ ও স্থিতিশীল নগর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১১৫.৮ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এডিবির এক কর্মকর্তা সর্বশেষ টিপিআরএমকে জানান, বাংলাদেশের জন্য ২০২৬ সালের প্রস্তাবিত পোর্টফোলিও একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা হিসেবে রাখা হয়েছে। কারণ বর্তমানে দেশে পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনার মতো কোনো মধ্য-মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই। যেমন পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা।

এডিবি সাধারণত তার সিপিএসের আওতায় বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। বর্তমান সিপিএস (২০২১-২০২৫) চলতি বছর শেষ হতে চলেছে। পরবর্তী সিপিএস প্রণয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তী সিপিএসে অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য তারা এডিবির সাথে আলোচনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে আগামী বছরগুলোতে বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার এডিবি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২.৫২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশে এডিবির বর্তমান পোর্টফোলিও প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ৫১টি চলমান প্রকল্প রয়েছে।

১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, সু-শাসন ইত্যাদি খাতে সহায়তা প্রদান করেছে যা। এতে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গুণগতমান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্নের নির্দেশ সেতু সচিবের
নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের অভিযান
শ্রমিক জাগরণের লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে শিমুল বিশ্বাসের আহবান
ডিএমপিতে সেপ্টেম্বর মাসে সংক্ষিপ্ত বিচারে ২৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি
দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও তুরস্ক আলোচনা
শিক্ষার্থী হত্যা : সাবেক ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছসহ পাঁচজন রিমান্ডে
লড়াই করে হারল বাংলাদেশ
ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার অভিনন্দন 
গ্রিস উপকূলে নৌকাডুবিতে ৪ অভিবাসী নিহত
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ : বাংলাদেশ-তুরস্ক সহযোগিতা আরও জোরদারের আহ্বান
১০