ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা ও সরকার আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে বুধবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
মূল্যবান ধাতুটির এই উল্লম্ফন আংশিকভাবে এসেছে প্রযুক্তি খাত নির্ভর শেয়ার বাজারের অতিরিক্ত উত্থান নিয়ে উদ্বেগ থেকে। যা অনেককে সম্ভাব্য সম্পদ বুদবুদের আশঙ্কায় ফেলেছে।
বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছেন। ফলে এর দাম এই পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনিশ্চিত সময়ে ঐতিহ্যগতভাবে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণ বুধবার আউন্স প্রতি ৪,০০৬.৬৮ ডলারে পৌঁছায়। যদিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ডলার অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে। রূপার দামও নিজস্ব রেকর্ডের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে। কারণ, এরফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য-বিশেষ করে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত-প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ব্যাংকের বিশ্লেষক টেলর নাগেন্ট লিখেছেন, ‘স্বর্ণের দামের দ্রুত উত্থানকে সমর্থন করছে এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়, বিশেষ করে চীনের শক্তিশালী চাহিদা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মুদ্রাস্ফীতি অনিশ্চয়তা স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।’
অন্যদিকে, স্বর্ণবাজারে ব্যস্ততার মধ্যেও এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলো তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যদিও এআই-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অনেক সূচক ও কোম্পানিকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
চিপ নির্মাতা জায়ান্ট এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওরাকলের প্রত্যাশার চেয়ে কম ক্লাউড কম্পিউটিং মুনাফার খবর বাজারে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ফলে ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচকই লালচিহ্নে বন্ধ হয়।
এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস লিখেছেন, বাজার যখন নিখুঁত ফলাফলের প্রত্যাশায় থাকে, তখন নগদ প্রবাহে সামান্য বিলম্বকেও ‘শেষ ডাক’-এর মতো মনে হয়। ওরাকলের খবর বাজার ধ্বংস করেনি, তবে সেটি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে।
প্রযুক্তি খাতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জোরালো ক্রয়চাপ দেখা গেলেও আজ এশীয় বাজারে বিক্রির প্রবণতা ছিল স্পষ্ট। হংকং ও তাইপেই সবচেয়ে বেশি পতনের মুখে পড়ে, অন্যদিকে সিডনি ও সিঙ্গাপুরেও সূচক নেমে যায়।
টোকিও’তে সূচক সামান্য বাড়ে, কারণ নতুন ব্যবসাবান্ধব রক্ষণশীল নেতা সানায়ে তাকাইচির নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও মুদ্রানীতি সহজ করার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ওয়েলিংটন, ম্যানিলা ও জাকার্তার বাজারেও সামান্য উত্থান দেখা গেছে।