বাসস
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৯

যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে অ্যাক্রিডিটেড সনদ জরুরি

ঢাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : গত ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামূক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সেলক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবের সনদ প্রদান, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ, পণ্যের উৎপাদন থেকে জাহাজীকরণ পর্যন্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় মাণ নিয়ন্ত্রণ, যথাযথ মান বজায় রেখে প্যাকেজিং ও সালমোনোলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত পণ্য সরবরাহ, কন্ট্রাক্ট ও জোন ফার্মিংয়ে গুরুত্বারোপ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞগণ। 
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভলপমেন্ট (র‌্যাপিড) আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণ’ বিষয়ক স্টেকহোল্ডার পরামর্শক সভায় আলোচকরা তাদের বক্তব্যে এসব সুপারিশ করেন। বৃটিশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় র‌্যাপিড পরামর্শক সভার অয়োজন করে। র‌্যাপিড নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি ইউংয়ের প্রধান অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান। সভায় প্রবন্ধ উপস্থান করেন র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব,  প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা, ব্রিটিশ হাইকমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহরুখ শাকির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির নিকট আমাদের কৃষি পণ্য পৌঁছাতে পারলেও, মূলধারার বাজারে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। মূলধারার বাজারে পৌঁছাতে হলে বিট্রিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের (বিআরসি) সনদ থাকাটা জরুরি। এই সনদ ছাড়া সেখানকার সুপারশপে কোন পণ্য রাখা যায় না। তিনি বলেন, বিএসটিআই এবং বিআরসির মধ্যে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে এই সনদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। ইলিয়াস মৃধা উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণসহ পর্যাপ্ত মাণ নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ১টি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার অনুরোধ জানান।
সভায় র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের ডেভলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিএিস) এর আওতায় সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। গত অর্থবছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যার মধ্যে কৃষি পণ্য ছিল ১৪ মিলিয়ন ডলারের। তিনি বলেন,বিদ্যমান বাণিজ্যিক সুবিধা ব্যবহার করে সেখানে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ৫ লাখ বাংলাদেশী যেমন আমাদের জন্য একটি প্রস্তুত থাকা বাজার, পাশাপাশি প্রবাসীদের লিংকেজ ব্যবহার করে মূলধারার বাজারে সহজে প্রবেশ করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান বলেন, বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে কৃষি পণ্য রপ্তানি ৩ থেকে ৫ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সরকার সেটা নিয়ে কাজ করছে। তিনি জানান, মৎস্য ও মৎস্যজাত এবং কৃষিপণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন যে বিমানবন্দর হচ্ছে, সেখানে একটি ওয়্যারহাউস নির্মাণের প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তিনি দেশীয় কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পোদ্যোক্তাদের যৌথ বিনিয়োগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যুক্তরাজ্য বা অন্যান্যে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যদি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করা যায়, তাহলে সব ধরনের প্রটোকল মেনে উন্নত দেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি করা সহজ হবে। তিনি মনে করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এইখাতে আমরা বিদেশী বিনিয়োগ না আনতে পারব, ততক্ষণ যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য উন্নত দেশের মূলধারার বাজারে আমাদের কৃষি পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে না।