বাসস
  ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪২

বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে রিপোর্ট : ডিসেম্বর ’২২-জুন ’২৩ এই ৬ মাসে ব্যবসায় পরিস্থিতির পূর্বাভাস ইতিবাচক 

ঢাকা, ৫ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের জন্য সামগ্রিক বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (বিসিআই) দাঁড়িয়েছে ৭৪.৪, যা কিনা আগামী ছয় মাসের জন্য ব্যবসায় পরিস্থিতির ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশের উদ্যোক্তারা আত্মবিশ্বাসী যে, আগামী ছয় মাসে উৎপাদন খাতের ক্রয়াদেশ, সেবা খাতে সেবার চাহিদা, বিক্রয় মূল্য ও ব্যবসায় কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। যদিও ব্যবসায়ীরা বিশেষত উৎপাদন খাতের ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, বাড়ি ভাড়া এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যয় কমাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন।
রোববার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) ও ইউএসএইড-ফান্ডেড ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ট্রেড একটিভিটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘৫ম বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে ২০২২’ প্রকাশ করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়কালে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপে ৫৬৭ জন উদ্যোক্তার মতামত নেয়া হয়েছে। জরিপ পরিচালনার উদ্দেশ্য হলো- গত বছরের ছয় মাস অর্থাৎ মাচর্, ২০২২ থেকে আগস্ট, ২০২২ সময়কালের ব্যবসায় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং তৎপরবর্তী ছয় মাসের (ডিসেম্বর-জুন, ২০২৩) অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি প্রশমনের প্রস্তুতি গ্রহণ ও পরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বিবেচনা করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। তিনি ব্যবসায় পরিস্থিতির উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, থিংকট্যাংক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি বিনিয়োগকারী, ট্রেডার ও কনজিউমারসহ সকলকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিল্ডের চেয়ারপার্সন নিহাদ কবির বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্প ও সেবাপ্রধান অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার ফলে এখানে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হচ্ছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে সাড়ে সাত শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। 
মূল উপস্থাপনায় বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এ বছরের বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভেতে ৭টি ব্যবসায়কেন্দ্রিক উপাদানের  মধ্যে ৬টিতেই উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছয়টি উপাদান হলো- কর্মসংস্থান, ক্রয়াদেশ, সেবা চাহিদা, ব্যবসায় কার্যক্রম, বিক্রয় মূল্য ও বিনিয়োগ। শুধুমাত্র ব্যবসায় ব্যয় সম্পর্কিত মতামতের ক্ষেত্রে নেতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি জানান, বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভেতে আগামী ছয় মাসের জন্য সেবা খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতকে বেশি উন্নতিব্যঞ্জক দেখা গেছে। জরিপে দেখা যায়, সেবা খাতের পরিচালন সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহৃত হচ্ছে না। একটি খাতভিত্তিক ও সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা যেতে পারে। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের তুলনায় নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় আস্থা কম পরিলক্ষিত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে।
ইউএসএইডের ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যাকটিভিটি’র চিফ অব পার্টি মার্ক শিম্যান জানান, উদ্যোক্তাদের মধ্যে ইতিবাচক আস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে ২০২২-২৩ সহায়তা করবে। 
অনুষ্ঠানে বিল্ডের লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির কো-চেয়ার আবুল কাসেম খান বলেন, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য এখন নীতি বাস্তবায়নকারীদের স্মার্ট পলিসি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া,  সম্ভাব্য রপ্তানি খাতসমূহকে তৈরি পোশাক খাতের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের যথাযথ ব্যবহার ও লজিস্টিকস অবকাঠামো খাতের উন্নয়নও  জরুরি।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে মূলত দেশের ব্যবসায় পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি আগাম পূর্বাভাস, যা কিনা উদ্যোক্তাদের সিদ্ধান্ত  গ্রহণে সহায়তা করে। এটি সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশ এখন প্রায় সূচকেই ভালো করছে। তবে সিএমএসএমই, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে আমাদের বেশি মনোযোগী হতে হবে। 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান জানান, রপ্তানি বহুমুখীকরনে এবং তৈরি পোশাক খাতের উপর অতিনির্ভরশীলতা কমাতে সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমীন মনে করেন, বেসরকারি খাতের জন্য যথার্থ ব্যবসায় পরিবেশ তৈরি করা সবচেয়ে জরুরি কাজ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মো. সামির সাত্তার বলেন, বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে আমাদেরকে ব্যবসায় পরিবেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, উদ্যোক্তারা যথেষ্ট আস্থাশীল ও ঘাত-সক্ষম। পরিচালনা ব্যয় কমানোর যে সুপারি করা হয়েছে, তা সরকারের যথাযথ বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। 
ইউনিডো বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ জাকি উজ জামান বলেন, চলমান বৈশ্¦িক সংকটের বিরূপ প্রভাবের সাথে খাপ খাইতে রিসোর্স এফিশিয়েন্সি ও ক্লিনার প্রোডাকশনের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করাও জরুরী। 
অ্যাকুমুলেটরস ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনাওয়ার মিসবাহ মঈন বলেন, ব্যাটারি বা অটোমোটিভ খাতের ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিক খাতের অন্তর্ভুক্ত। এ খাতের ব্যাপক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ। এ খাতকে অনানুষ্ঠানিক-প্রধান থেকে আনুষ্ঠানিক-প্রধান খাতে রূপান্তর করার জন্য সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আমরা অনুরোধ করব, যেন ট্যাক্স রেজিমের বিষয়ে পুনবির্বেচনা করা হয়। 
বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নকিব উদ্দীন খান বলেন, লজিস্টিকস ইকোসিস্টেম মেকানিজমের তিনটি প্রধান সফলতার জায়গা হলো- আস্থাশীলতা, গতি ও ব্যয় হ্রাস। তিনি লজিস্টিকস উপখাতসমূহের সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এন্ড-টু-এন্ড ইন্টিগ্রেশন, লজিস্টিকস অবকাঠামো খাতের মেগা প্রকল্পসমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন ও সরকারি নীতিমালা সহজীকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।