বাসস
  ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০০

বরগুনায় জেলে জাকিরের কারুশিল্প চর্চা

বরগুনা, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস): জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের দরিদ্র জেলে জাকির হোসেন বনের গাছের শিকড়-বাকড় ও পরিত্যক্ত কাঠ দিয়ে দৃষ্টি নন্দন নানা রকমের শৈল্পিক ‘শো-পিস’ তৈরি করছেন। তার তৈরি করা আকর্ষণীয় শো-পিসগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, স্পিড বোট, জাতীয় পতাকা, উড়োজাহাজ, ট্রলার, নৌকা, হরিণ, মাছ প্রভৃতি। ৫৫ বছর বয়সী এ কারু শিল্পীর বাস পাথরঘাটা উপজেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদ পাড়ের রুহিতা গ্রামে।
বংশ পরম্পরায় তিনি মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর পাশাপাশি পর্যটনপ্রেমী ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী হিসেবে জাকিরের পরিচিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি লোকালয় থেকে ৩ শতাধিক সাপ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছে। বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখায় এলাকায় তাকে ‘টাইগার জাকির’ নামেও ডাকা হয়।
জাকির হোসেন জানান, গরিবের সংসারে জন্ম নেওয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে মাছ ধরার কাজ করেছি। জীবিকার তাগিদে বনের মধ্যে প্রায়ই থাকতে হয়। বন ধ্বংস ও বন্যপ্রাণী হত্যা সহ্য করতে পারতাম না। বনের বৃক্ষরাজির শ্বাসমূল দেখে সেটা ভালো লাগায় তুলে এনে ১৫ বছর আগে খোদাইয়ের কাজ শুরু করি। দুই বছর আগে ২২ হাজার টাকায় আমার কিছু ‘শো-পিস’ বিক্রি করেছি। আমি চাই আমার এখান থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে পিস’গুলো নিয়ে সংরক্ষনণকরা হোক।
প্রতিবেশিরা জানান, টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে সংসার চললেও জাকির শিল্পচর্চা থেকে পিছপা হননি। নিভৃত পল্লীতে তার এসব শিল্পকর্ম সব শ্রেণির মানুষকেই মুগ্ধ করছে। অনেকে দেখতে আসছেন জাকিরের এসব কারুশিল্প।
পাথরঘাটা উপজেলার উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রস্টের নির্বাহী পরিচালক ও সাংবাদিক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, চরম দারিদ্রের মধ্যেও জাকিরের প্রতিভার বিকাশ ঘটছে। তাকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া জরুরি।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, জাকিরের প্রতি আমাদের সুদৃষ্টি রয়েছে। এ দরিদ্র জেলে পিছিয়ে থাকা উপকূলে একটি কারু-জাদুঘর তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।